কৃষ্ণচূড়া-জারুল আভায় সেজেছে প্রকৃতি ছড়াচ্ছে সৌন্দর্য। কৃষ্ণ-চূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কৃষ্ণ-চূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে / আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। ইট-পাথর আর কোলাহলের নগরীতে যেন সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতেই ফোটে কৃষ্ণ-চূড়া। তার রঙ যেন সতেজ করে দেয় পথিকের মন। নগরীর রুক্ষ প্রকৃ’তিতে যেন এখন জীবনের স্পন্দন।
ঢাকায় কৃষ্ণ-চূড়ার সবচেয়ে বেশি গাছ দেখা যায় সংসদ ভবন এলাকায়। এর মধ্যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সড়কের দৃষ্টিনন্দন ফুল নজর কাড়ছে সবার। এছাড়া কৃষ্ণ-চূড়াসহ অন্যান্য ফুল দেখা যায় এয়ারপোর্ট রোড, সাতমসজিদ রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাতিরঝিল, রমনা উদ্যান, মিন্টো রোড এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও। ভোরের নরম আলো, তপ্ত দুপুর কিংবা সন্ধ্যা নামার আগেও কৃষ্ণ-চূড়াসহ এসব দৃষ্টিনন্দন ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন নগরবাসী।
কৃষ্ণচূড়াঃ একটি উদ্ভিদ এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণ-চূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ফ্যাবেসি (Fabaceae)পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত।
জারুলঃ বাংলাদেশের নিম্নভূমির একান্ত অন্তরঙ্গ তরুদের অন্যতম। লেজারস্ট্রমিয়া গণের এই উদ্ভিদ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রজাতি।
কৃষ্ণচূড়া-জারুল আভায় সেজেছে প্রকৃতি ছড়াচ্ছে সৌন্দর্য
রাজধানীতে গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে মনে হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের সঙ্গে ডালে ডালে যেন আগুন লেগেছে। গ্রীষ্মকালে সড়কের দুই পাশে নিজেকে মেলে ধরে এই ফুল। ঢাকার বিভিন্ন পার্ক ও সড়কের দুই পাশে এখন কৃষ্ণ-চূড়া, রাঁধাচূড়া, সোনালু, জারুল ফুটেছে। প্রকৃ’তি মেলে ধরেছে তার আপন রঙ।
সংসদ ভবনের এলাকায় ঘুরতে এসেছেন সামিয়া ইসলাম। তিনি জানান, কৃষ্ণ-চূড়া ফুল দেখব আর নিরিবিলি এখানে বসে থাকবো বলে এই সড়কে এসেছি। কৃষ্ণ-চূড়া ফুল দেখে মনটা হালকা হয়ে গেছে। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রকৃ’তির এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি। ইটপাথরের শহরে এমন দৃশ্য মন ভালো করে দেয়। তাই এখানে ঘুরতে এসেছি। ফুলের সঙ্গে ছবিও তুলেছি। কয়েক দিন পরই এই জায়গা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠবে, তখন প্রকৃ’তির এই রূপ উপভোগ করা কঠিন হবে। তাই আগেই এসেছি।
জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন আগারগাঁওয়ের দিকে সড়কটিতে ফুটেছে কৃষ্ণ-চূড়া, রাঁধাচূড়া ফুল। এছাড়া সংসদ ভবনের আশপাশের সড়কে ফুটতে দেখা গেছে কৃষ্ণ-চূড়া, রাঁধাচূড়া, জারুল, সোনালু। এই এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ দল বেঁধে কৃষ্ণ-চূড়া ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। মোটরসাইকেল বা গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেল কয়েক তরুণকে। উঠতি বয়সি কিশোর-কিশোরীরা ভিড় করছেন ফুলের সঙ্গে নিজের একটি মুহূর্তকে বন্দি করতে।
কৃষ্ণ-চূড়ার আরেক নাম ‘গুলমোহর’। আর কৃষ্ণ-চূড়ার মতো দেখতে হলুদ ফুল হলো রাঁধাচূড়া। রাজধানীতে এখন এই দুটি ফুলই বেশি দেখা যায়। আর সোনালু ও জারুল কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় দেখা যায়। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে প্রকৃ’তি তার আপন রঙ হারিয়ে ফেলছে। গাছ কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে এখন এসব প্রাকৃতিক দৃশ্য দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।
পরিকল্পিতভাবে রাজধানীতে আরো গাছ লাগালে সব ঋতুতেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে রাজধানী, বলছেন দর্শনার্থীরা। সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরতে আসা সাবিহা আক্তার জানান, প্রকৃ’তির মাধুর্যতা, স্নিগ্ধতা ছড়াতে আমাদের উদ্যোগী হয়ে এসব গাছ লাগাতে হবে চারদিকে। তাহলে আমরা মনোরম দৃশ্য প্রতিবছরই দেখতে পাব। প্রকৃতি মেলে ধরবে তার সৌন্দর্য।
আরও দেখুনঃ