ক্রিমিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা: গণভোটের এক দিন পরে, গতকাল সোমবার, ক্রিমিয়া তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। তারা রাশিয়ায় যোগ দিতে মস্কোর কাছে আবেদনও জানিয়েছে। তবে এই গণভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন । রাশিয়ার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে ক্রি’মিয়ায় গণভোটের পেছনে। (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রিমিয়া প্রশ্নে রাশিয়ার ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দেন, ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার পরবর্তী ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে আরও কঠিন অবরোধ আরোপ করা হতে পারে।
গতকালই যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের রুশপন্থী ২১ জন কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও তাঁদের সম্পদ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে। ওবামা বলেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে, রাশিয়া ‘বিশ্ব থেকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং বিশ্বে তাদের অবস্থান আরও ক্ষয় হবে’। এর আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এ সময় পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী ক্রি’মিয়ায় গণভোট সম্পূর্ণ বৈধ।’
ক্রিমিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা
গত রোববার ক্রিমিয়ায় অনুষ্ঠিত গণভোটের ফলাফল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলের ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। গণভোটের এই রায়কে ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণার পর ইউরোপের মানচিত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের উপলক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় ঠেকেছে।
গণভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই ক্রি’মিয়ার মস্কোপন্থী প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসাইনভ গতকাল জানান, তিনি মস্কোয় যাচ্ছেন। গতকাল ক্রি’মিয়ার রুশ-সমর্থিত পার্লামেন্টে গৃহীত ঘোষণায় বলা হয়, ‘ক্রি’মিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ ও বিশ্বের সব দেশের প্রতি আবেদন জানানো হচ্ছে।’ ক্রি’মিয়ার পার্লামেন্টে গতকাল অনুষ্ঠিত ওই ভোটাভুটি অনুযায়ী, ইউক্রেনের কোনো আইন আর ক্রি’মিয়ায় প্রযোজ্য হবে না এবং সেখানকার সব রাষ্ট্রীয় সম্পদ স্বাধীন ক্রি’মিয়ার বলে বিবেচ্য হবে। এলাকাটি রুশ মুদ্রা রুবল গ্রহণ করবে। ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট চলতি মাসের শুরুতে গণভোটের ঘোষণা দেয়। এর আগে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন।
নির্বাচন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গণভোটে প্রায় ৯৭ শতাংশ ভোটারই রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৮৩ শতাংশ। তবে ক্রিমিয়ার প্রায় ১২ শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী তাতার জনগোষ্ঠী গণভোট বর্জন করে। তাতারসহ কিছু জনগোষ্ঠীর আশঙ্কা, ক্রেমলিনের শাসনে গেলে তাদের খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নিষেধাজ্ঞা: ক্রি’মিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই রাশিয়া ও ইউক্রেনের ২১ জন কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপে তাঁদের সম্পদ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী, ক্রিমিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসাইনভ এবং ইউক্রেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ।
এদিকে ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, অধিকতর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তিনি প্রস্তুত। তবে তা নির্ভর করবে উত্তেজনা প্রশমনে রাশিয়া কী করে তার ওপর। ৪০ হাজার রিজার্ভ সেনা সংগ্রহ ইউক্রেনের: ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনিয়ে ইয়াৎসেনিউক ক্রি’মিয়ার গণভোটকে ‘সার্কাস পারফরম্যান্স’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ২১ হাজার রুশ সেনা তাদের বন্দুকের জোরে ওই গণভোটের বৈধতা প্রমাণের চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ‘যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি’র অংশ হিসেবে ৪০ হাজার রিজার্ভ সেনাসদস্য সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে। ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সেক্রেটারি আঁদ্রে পারুবিয়ে পার্লামেন্টকে বলেন, ২০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে নিযুক্ত করা হবে। বাকি ২০ হাজার সেনা নবগঠিত ন্যাশনাল গার্ডে দায়িত্ব পালন করবে।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পুতিনের স্বীকৃতি: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল ক্রি’মিয়াকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এক আদেশে সই করেছেন। এদিকে ‘অদূর ভবিষ্যতে’ ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ করার পথ সুগম করতে রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমা একটি আইন প্রণয়ন করবে। পার্লামেন্টে ডেপুটি স্পিকারের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স গতকাল এ খবর দিয়েছে।
ডুমার ডেপুটি স্পিকার সের্গেই নেভারভ ইন্টারফ্যাক্সকে বলেন, ‘ক্রিমিয়ার গণভোটের ফল স্পষ্টই দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানকার জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ কেবল রাশিয়ার সঙ্গে দেখতে চায়। ডুমার কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়ার বর্তমান আইনেই ক্রিমিয়া রুশ ফেডারেশনের অংশ হতে পারে। ২০০১ সালে এ-সংক্রান্ত যে আইনটি পাস হয়। পুতিন এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ক্রিমিয়ার জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।
মস্কোর সঙ্গেক্রিমিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক
ত্রয়োদশ-অষ্টাদশ শতাব্দী
তাতার রাজ্য (অটোমান সাম্রাজ্যের মিত্র ছিল) ১৭৮৩
ক্রি’মিয়াকে রাশিয়া নিজেদের শাসনে আনে ১৯৪৪
জোসেফ স্ট্যালিন তাতার জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করেন ১৯৫৪
ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের (তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র) কাছে হস্তান্তর করেন নিকিতা ক্রুশচেভ ১৯৯১
সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর স্বাধীন ইউক্রেনের অংশ হয় ১৯৯২
ইউক্রেনের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হয় মার্চ ১৬, ২০১৪
গণভোট অনুষ্ঠিত, রাশিয়ার সঙ্গে পুনরায় যোগদান পক্ষে রায়