[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ফের অবরোধ : শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার

গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরে টানা ৫৩ ঘণ্টা পর তৃতীয় দিন সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করেছে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের দেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে তারা মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এরফলে দুদিনের বেশি সময় অচল থাকা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিš‘ বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে তাদের একটি অংশ পুনরায় একই ¯’ান একই দাবিতে অবরোধ করেন। এতে ওই মহাসড়কে ফের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ প্রত্যাহারের পরপরই জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির নেতৃত্বে শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। গত শনিবার সকাল ৯টা হতে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকরা ওই মহাসড়ক অবরোধ করেন। এদিকে শ্রমিক অন্দোলনের কারণে ভাঙচুর এড়াতে আশপাশের আরো ১৫টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, মহানগরীর মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানায় প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। তাদের গত দুই মাসের (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) বেতন বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর নির্ধারিত তারিখে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও ওইদিন তা না করে কারখানা তালাবদ্ধ করে কর্মকর্তারা চলে যান। এরপর থেকে মালিক পক্ষের কেউ কারখানায় আসেননি, এমনকি কারখানার উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিনই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় এসে ফিরে যা”েছন। এর জের ধরে শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অব¯’ান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কলম্বিয়া কারখানার সামনে অব¯’ান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে ওই মহাসড়কের উভয় পাশে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনা¯’লে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে শ্রমিকরা নিজেদের দাবিতে অনঢ় থেকে রাতভর সড়কে অব¯’ান করতে থাকে। তারা গত ৩ দিন ধরে সোমবার দুপুর পর্যন্ত টানা প্রায় ৫৩ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
এদিকে লাগাতার সড়ক অবরোধের কারণে ¯’বির হয়ে পড়েছে গাজীপুরের জনজীবন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিকল্প পথে চলাচল করতে গিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-বাইপাস মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
এমন পরি¯ি’তিতে সোমবার সকাল হতে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ মিয়াসহ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, শিল্প ও থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনা¯’লে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইউএনওর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কে.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের এ কথোপকথন মাইকে প্রচার করা হয়। তার আশ্বাসে গতকাল দুপুর সোয়া দুইটার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পরে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ইউএনও এরশাদ মিয়া আন্দোলনরত শ্রমিকদের ২৫/২৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে ঘটনা¯’ল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের সাথে আলোচনা চলছিল।
এদিকে অবরোধ প্রত্যাহারের প্রায় এক ঘণ্টা পর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি অংশ ফের ওই এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে আবারো জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। পাওনাদি পরিশোধের সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। আলোচনার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তারা অবরোধ কর্মসূচির ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

Leave a Comment