চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠকে মূল লক্ষ্য থাকবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা। সোমবার এক বিবৃতিতে সফরসঙ্গী এক মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।
‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এই সফরে রামাফোসার সঙ্গে রয়েছেন চারজন মন্ত্রিসভার সদস্য। হোয়াইট হাউসে আগামী বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে রামাফোসার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জোহানেসবার্গ থেকে এএফপি জানায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপের দিকে যায়। এই সফরকে তাই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষিমন্ত্রী জন স্টেনহুইসেন জানান, ‘চাকরি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের স্বার্থে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধরে রাখা এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন।
গত এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকান পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যদিও পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত রাখা হয়। এই সিদ্ধান্তে কিছু খাতে কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া ‘আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট’ (এজিওএ) নিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষ উদ্বেগ রয়েছে। এই সুবিধার মেয়াদ আগামী সেপ্টেম্বরেই শেষ হতে যাচ্ছে এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটি নবায়ন না-ও করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রিটোরিয়া।
স্টেনহুইসেন বলেন, ‘এজিওএ আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সুবিধা হারালে কৃষি খাত, কৃষি শ্রমিক এবং সামগ্রিক অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্তমানে বেকারত্বের হার প্রায় ৩২ শতাংশ, ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং কর্মসংস্থান তৈরি রামাফোসা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।
এ সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো দক্ষিণ আফ্রিকায় তথাকথিত ‘শ্বেত গণহত্যা’ নিয়ে ছড়ানো অপপ্রচারের প্রতিবাদ করা। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ভিনসেন্ট মাগবেন্য এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেত আফ্রিকানার সম্প্রদায়ের অন্তত ৫০ জন সদস্যকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যারা অভিযোগ করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের হাতে তারা নিপীড়িত হচ্ছেন।
স্টেনহুইসেন, যিনি প্রো-বিজনেস ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) দলের নেতা, গত নির্বাচনের পর রামাফোসার গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারে যোগ দিয়েছেন।
এছাড়া এ সফরে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা আগামী নভেম্বরে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।