[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

দিনকাল বন্ধ নিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্ন উঠছে কেন?

আইনের সুনির্দিষ্ট ধারা প্রতিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় দিনকাল পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল হয়েছে। আর এ ঘটনার পরই বাংলাদেশবিরোধেী প্রচারণায় মেতে থাকা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি ও আল জাজিরা সমালোচনায় সরব হয়েছে। এদের সঙ্গে কিছু মানুষ বলতে শুরু করেছেন বিএনপির মূখপাত্র হওয়ার কারণে দৈনিক দিনকাল বন্ধ করেছে সরকার।

মত প্রকশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের উদ্দ্যেশ্যে দৈনিক দিনকাল বন্ধ করা হয়েছে-এমনটা যারা বলছেন, আসলে তাদের কথার যৌক্তিকতা কতটুকু? সরকার কি আসলেই দিনকাল পত্রিকাকে ভয় পেয়ে বন্ধ করে দিয়েছে? সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনও ইস্যুতে দিনকাল পত্রিকা কি কখনো কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে? মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই সরকার যদি ভয় পাবে তাহলে প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মত পত্রিকার ডিক্লারেশন কেন বাতিল করছে না?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখার আগে দিনকালের অতীত ও আইনের কোন ধরা ভঙ্গের কারণে পত্রিকাটি বন্ধ হয়েছে তা দেখে আসা যাক।

দিনকালের উদ্ভব:

দিনকাল পত্রিকা বিএনপির মূখপাত্র হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। পত্রিকাটি জন্ম থেকেই বিএনপির গুণগান প্রকাশ এবং দেশের স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষদের চরিত্র হননে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শুরুতে প্রকাশক ছিলেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মাজেদুর রহমান। মাগুরার উপনির্বাচনসহ নানা কাণ্ডে এই মাজেদুর রহমান ছিলেন বিতর্কের তুঙ্গে।

এরপর ২০০২ সালে দিলকালের প্রকাশক ও মুদ্রাকর হিসেবে সামনে আসেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। হাওয়া ভবন খুলে রমরমা চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন তারেক। দেশ-বিদেশে তারেকের কূকীর্তি নিয়ে চলছে সমালোচনা। এ সময়টাতে বিএনপি দলীয় অনুগত অর্থবানদের দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ খুলতে শুরু করেন। তারেকও নিজের ইমেজ ঘাটতি মেটাতে দিনকালের প্রকাশক ও মুদ্রাকর হন। কিন্তু দিনকাল পত্রিকা কখনোই গণ মানুষের মানুষের পত্রিকা হতে পারেনি।  পাঠকপ্রিয়তা পায়নি, এমনকি বিএনপির মধ্যেও পত্রিকাটি কখনো জনপ্রিয় হতে পারেনি।

 যে আইনবলে দিনকাল বন্ধ হয়েছে

দৈনিক দিনকাল বন্ধের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে; যে কারণগুলো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এরমধ্যে অন্যতম হলো- প্রকাশক ও মুদ্রাকর তারেক রহমান দীর্ঘদিন দেশের বাইরে রয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি গুরুতর মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং আইনের চোখে পলাতক। এ দুটি ঘটনাই আইনের চরম লঙ্গন।

 

দিনকাল বন্ধ নিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্ন উঠছে কেন?

এছাড়া প্রত্রিকাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে অফিস ও ছাপাখানার ঠিকানা পাল্টেছে। এটাও আইনের লঙ্ঘন। আইনের এতগুলো ধারার অমান্য করার পরেও দিনকাল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া কি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের পর দিনকাল কর্তৃপক্ষ গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে আপিল করেছিল। এ আবেদনের কয়েক দফা শুনানির পর প্রেস কাউন্সিল গত রোববার  ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনকাল বাতিলের আদেশ অব্যাহত রাখে।

 ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ:

গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান দিনকাল পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের অফিস আদেশ জারি করেন। কেন দিনকালের প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে তা অফিস আদেশে বিস্তারিত বলা হয়েছে। নিচে অফিস আদেশের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।

আদেশে বলা হয়, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখের পত্রে পত্রিকাটির প্রকাশক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করায়, ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতি ব্যতীত অফিসের ঠিকানা ও ছাপাখানা পরিবর্তন করায় পত্রিকাটি বাতিল করার জন্য এ কার্যালয়কে অনুরোধ করা হয়।

এরপর পত্রিকাটিকে কারণ দর্শানোর নোটি প্রদাণ করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি উক্ত কারণ দর্শানোর উপযুক্ত জবাব এ কার্যালয়ে দাখিল করেননি। তথাপি পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। পরবর্তীতে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর উক্ত পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক ও ছাপাখানা পরিবর্তন বিষয়ে কোনো প্রমাণ প্রকাশনা অধিদপ্তরকে অবহিত না করায় ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হয়।

এতদপ্রেক্ষিতে পত্রিকার প্রকাশক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করায়, ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতি ব্যতীত অফিসের ঠিকানা ও ছাপাখানা পরিবর্তন করায় ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন আইন ১৯৭৩ এর যথাক্রমে ১০, ১১, ১৬ এবং ২০(১)(খ) ধারা লঙ্ঘন করায় ঘোষণাকৃত দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর তারেক রহমানের নামে বিগত ১৬ এপ্রিল ২০০২ তারিখে ৭২/২০০২ নং নিবন্ধনমূলে প্রদানকৃত পত্রিকাটির (ঘোষণাপত্র (ফরম বি) এবং পত্রিকা মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিল করা হলো।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

আইনের প্রয়োগ কি বন্ধ থাকবে?

ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী, কোনো পত্রিকার প্রকাশক বা সম্পাদক একটানা ছয়মাস দেশের বাইরে অবস্থান করতে পারবেন না। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল হয়ে যায়।

এই আইনের প্রয়োগ নতুন না। এর আগেও ঘটেছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে একই নিয়মের কারণে প্রকাশক, মুদ্রাকর বদলানোর নজির রয়েছে।

দেশে যে আইনের প্রয়োগ চলছে, সেই একই আইনের কারোর জন্য ভিন্ন হতে পারে না। দিনকাল বন্ধের আগেও ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইনের বহু ব্যবহার দেখা গেছে। দিনকালের প্রকাশক, মুদ্রাকর তারেক রহমান টানা ১৫ বছর দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। অথচ দিনকাল বন্ধের আগের দিনও প্রিন্টার্স লাইনে তারেক রহমানের নাম ছাপা হয়েছে। অস্ত্র, হত্যাকাণ্ড, দূর্নীতিসহ নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তারপরও মত প্রকাশের সুযোগ দিতে আইন কি তারেক রহমানকে দিনকালে অধিষ্ঠিত রাখবে?

 তারেকের কূকীর্তিই দিনকাল বন্ধের কারন:

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়। খুন, গুম, সংখ্যালঘু নির্যাতন, দূর্নীতি জঙ্গিদের উত্থাণ নানা ঘটনায় আলোড়িত হয়ে ওঠে দেশ। অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেট ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের অভায়রণ্যে পরিণত হয় বাংলাদেশ। তখন বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশকে নিয়ে নানা নেতিবাচক আলোচনা শুরু হয়।

আর হাওয়া ভবনে বসে এসব কূকীর্তির নেতৃত্ব দিতে থাকেন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে বসেই তখন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা তৈরি করে তারেক রহমান। ২০০৪ সালের একুশে অগাস্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশে শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেদিন শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকতর্মী নিহত হন।

 

দিনকাল বন্ধ নিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্ন উঠছে কেন?

 

এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই হাওয়া ভবন থেকে দেশে মিডিয়া অঙ্গন দখল করার ষড়যন্ত্র তৈরি করা হয়। মির্জা আব্বা, মোসাদ্দেক আলী ফালু, সাদেক হাসেন খোকা, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তারেক রহমান নিজেসহ বিএনপির একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি মিডিয়া হাউজ খুলতে শুরু থাকেন।

তারেক দায়িত্ব নেন দিনকালের। বিভিন্ন মানুষের কাছ আদায় করা চাঁদাবাজির ভাগ ও প্রচুর সরকারি বিজ্ঞাপনে পুষ্ট হতে থাকে দিনকাল। বিনিময়ে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতিই ছিল তারেকের গূনগান গাওয়া। একুশে অগাস্টসহ বিভিন্ন ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে সমস্ত পত্রিকাজুড়ে চলতো মিথ্যার বেসাতি। দিনকালের পাতায় পাতায় থাকতো তারেক গং অপরাধী চক্রের নানা অপকর্ম ঢাকার মনগড়া তথ্য। তারেক ও তার সহযোগিদের নিয়ে প্রকাশ করা হত প্রশংসাসূচক নিবন্ধ, কলাম, নিউজ।  দিনকাল এতটাই মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতো যে, বিএনপির সমর্থকরাও এই পত্রিকাটিকে কোনওদিন গ্রহণ করেনি। একারণে দৈনিক দিনকাল কখনোই প্রচারপ্রিয় বা প্রথমসারির পত্রিকা হতে পারেনি।

তারেকের অপকর্ম ঢাকার মাউথপিছ কেন আইনের তোয়াক্কা করবে? আইনের লঙ্ঘন তাদের মজ্জাগত। কিন্তু দেশের প্রচলিত আইন দেশের মধ্যেই কারও জন্য কি ভিন্ন হতে পারে? আর আইনের লঙ্ঘনকারীকে নিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলার অর্থ কী? যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়েও এর আগে আমরা মানাবাধিকারের প্রসঙ্গ যারা এনেছে; দিনকাল নিয়েও সেই একই গোষ্ঠী মানবাধিকারের বয়ান দিচ্ছে। এদের উদ্দ্যেশ্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিস্কার।

শেষ কথা

গত ১৪ বছর আগে দেশের দৈনিক পত্রিকা ছিল৪৫০টি। সেখান থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে হয়েছে ১ হাজার ২৬০টি। অনলাইন গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। একই সঙ্গে টেলিভিশনের সংখ্যা ১০টি থেকে এখন ৩৬টি সম্প্রচারে আছে। এফএম ও কমিউনিটি রেডিওগুলোও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে লাইসেন্স পেয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংকুচিত হচ্ছে এ তথ্য এটা কি সঠিক?

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment