শনিবার সকালে ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
জানা যায়, সকালে কাংশা ইউনিয়নের পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের নুহু মিয়ার ধানখেত থেকে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফসল বাঁচাতে স্থানীয় কৃষকদের দেওয়া বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে জড়িয়ে হাতিটি মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মকরুল ইসলাম আকন্দ।
ধানক্ষেত থেকে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার
খবর পেয়ে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূইয়া, বন বিভাগের গজনী বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দসহ অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে মৃত হাতিটির নমুনা সংগ্রহের পর সেখানেই হাতিটি মাটিচাপা দেওয়া হয়।
বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মকরুল ইসলাম আকন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, মৃত হাতিটি পুরুষ জাতের। এর বয়স সাড়ে তিন থেকে চার বছর। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফসল বাঁচাতে স্থানীয় কৃষকদের দেওয়া বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে জড়িয়ে হাতিটি মারা গেছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু পরিমাণ বৈদ্যুতিক ও জিআই তার জব্দ করা হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ টি এম ফায়েজুর রাজ্জাক আকন্দ বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে হাতিটির দেহে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য কয়েকটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে (সিডিআইএল) ল্যাবে পরীক্ষার পর হাতিটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, গারো পাহাড়ে বারবার হাতির মৃত্যু ও হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব হাতি নানা উপায়ে হত্যা করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু একটি হাতি হত্যার ঘটনায় মামলা করা হলেও বাকিগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাতি ও মানুষের সহাবস্থানের জন্য গারো পাহাড়ে হাতির অভয়াশ্রম ও খাদ্যের সংস্থান করার জোর দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ধান পাকার মৌসুম এলেই গারো পাহাড়ের পাদদেশের ধান খেতগুলোয় হানা দিতে শুরু করে হাতিরা। কিছুদিন ধরে বন্য হাতির দল শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। ফসল রক্ষায় সচেষ্ট মানুষ এবং হাতির দ্বন্দ্বে গত দেড় মাসে সীমান্তের চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবে জেলায় ২৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে, যার বেশিরভাগই বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে জেলায় হাতির আক্রমণে অন্তত ২১ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও দেখুনঃ