কত্থক কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ [ Kathak Legend Pandit Birju Maharaj passes away ]। কিংবদন্তি আজ তার পৃথিবীর যাত্রা শেষ করে, আমাদের থেকে বিদায় নিলেন। কাগজের নাম ব্রিজ মোহন নাথ মিশ্র, কিন্তু পরিচিত ছিলেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজ নামে। তিনি কথক নৃত্যশিল্পীদের কিংবদন্তি পরিবার, “মহারাজ’ পরিবারের বংশধর। তার তার দুই চাচা, শম্ভু মহারাজ এবং লাছু মহারাজ নিজগুণে কথক ইতিহাসের দুই উজ্জ্বল তারকা।
বিরজু মহারাজ জন্ম নেন তার পিতা ও গুরু আচান মহারাজের ঘরে, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ তারিখে। শিশু বয়স থেকেই তিনি মেধার আভা ছড়িয়েছেন। সবার অজান্তেই তিনি হারমোনিয়াম বাজনা শিখে যান কোন তালিম ছাড়া। নৃত্যের তালিমের পাশাপাশি নিজের আগ্রহেই গাইতে থাকেন ঠুমরী, গজল ও ভজন।
পণ্ডিত বিরজু মহারাজকে ভারতের কত্থক নৃত্যের “লখনউ কালকা-বিন্দাদিন” ঘরানার একজন প্রবক্তা বলা হয়।
তার প্রয়াণে গুরুকুল পমুখ সুফি ফারুক গুরুকুল পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেন। শোক বার্তায় তিনি বলেন “এখনকার পৃথিবী পারফরমেন্সের। তাই পৃথিবী তৈরি করছে পারফর্মার, আর্টিস্ট খুব একটা তৈরি করছে না বা হচ্ছে না। আমাদের দেখা সময়ের একজন কমপ্লিট আর্টিস্ট আজ চলে গেলেন। যাকে বলে “ট্রু আর্টিস্ট”।
![কত্থক কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ [ Kathak Legend Pandit Birju Maharaj passes away, 17th January 2022 ] 2 google news](https://glive24.com/wp-content/uploads/2023/01/google-news.jpg)
পণ্ডিত বিরজু মহারাজ ছিলেন এই জামানায় একজন কমপ্লিট আর্টিস্ট। কত্থক জগতের শিরোমণি তো তিনি ছিলেনই। এছাড়া দারুণ গাইতেন ঠুমরী, দাদরা, গীত, গজল ও ভজন। ভালো ছবি আঁকতেন। ভালো রান্না করতেন। ছোট বড় সবার সাথে অমায়িক ব্যবহার ছিল।
তাকে কয়েকদিন সেবা করার সুযোগ পাওয়া একজন বলেছিলেন – মহারাজ কে এক কাপ চা দিলেও অন্তত ৩ বার ধন্যবাদ দিতেন। ছোট খাটো অনুরোধ এমন করে করতেন, যেন মনে হতো তিনি সেই সামান্য সেবাটুকু পেলে চির কৃতজ্ঞ থাকবেন, অথচ তার চেয়ে বেশি তার অধিকার ছিল।
তার ছিল আল্টিমেট পলিশনেস, নাজাকাৎ। যেটা কালে ভাদ্রে দেখা যায়। যা একজন মানুষকে মহান করে তোলে। পৃথিবী শুধুমাত্র মহান শিল্পীই নয়, একজন আদর্শ মানুকে হারালো।
এদের চলে যাবার সময় মনে পড়ে নজরুলের ” আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেবনা ভুলিতে”
![কত্থক কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ [ Kathak Legend Pandit Birju Maharaj passes away, 17th January 2022 ] 3 Pandit Birju Maharaj, পন্ডিত বিরজু মহারাজ](https://glive24.com/wp-content/uploads/2022/01/Pandit-Birju-Maharaj-পন্ডিত-বিরজু-মহারাজ-6-300x169.jpg)
Table of Contents
বিরজু মহারাজের শৈশব:
বিরজু মহারাজের জন্ম হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার পরিবারের প্রধান জগন্নাথ মহারাজ (যিনি লখনউ ঘরানার আচ্চন মহারাজ নামে পরিচিত) রায়গড় রাজ্যের দরবারী নর্তক ছিলেন। বিরজুর তালিম হয়েছিলো তার বাবা ও দুই চাচা লাছু মহারাজ এবং শম্ভু মহারাজের কাছে। বিরজুর বয়স যখন ৭, তখন তিনি প্রথমবার স্টেজে পারফরম্যান্স দেখিয়ে সবাইকে চমকে দেন। বিরুজুর বয়স যখন মাত্র ৯, তখন তার বাবা মারা যান। আর্থিক অনটন সহ নানা রকম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেটেছে তার শৈশব। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন – খাবার এক বেলা কম খেলেও চোখের পানি লুকিয়ে রেয়ার পুরোপুরি চালিয়ে যেতাম।
![কত্থক কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ [ Kathak Legend Pandit Birju Maharaj passes away, 17th January 2022 ] 4 Pandit Birju Maharaj, পন্ডিত বিরজু মহারাজ](https://glive24.com/wp-content/uploads/2022/01/Pandit-Birju-Maharaj-পন্ডিত-বিরজু-মহারাজ-1-250x300.jpg)
বিরজু মহারাজের কর্মজীবন :
বিরজু মহারাজ মাত্র তেরো বছর বয়সে নৃত্য শিক্ষকতা শুরু করেন। তার ক্যারিয়ারের শুরু হয় নয়াদিল্লির সঙ্গীত ভারতীতে। এরপর তিনি দিল্লির ভারতীয় কলা কেন্দ্রে এবং কথক কেন্দ্রে ( সংগীত নাটক আকাদেমির একটি ইউনিট) শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি অনুষদের প্রধান এবং পরিচালক ছিলেন। মহারাজ ১৯৯৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসারের পরে তিনি দিল্লিতে “কালাশ্রম” নামে নিজের নৃত্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
বিরজু মহারাজ ভারতীয় কলা কেন্দ্রে এবং কথক কেন্দ্রের মাধ্যমে অংসংখ্য শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলেছেন। এছাড়া কালাশ্রমের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। এর পাশাপাশি সারা পৃথিবী জুড়েই তাঁর শিক্ষার্থী ছিল। তিনি পৃথিবীজুড়ে নৃত্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নাচের কর্মশালা ও ক্লাস করিয়েছেন।
বিরজু মহারাজ সত্যজিৎ রায়ের “শতরঞ্জ-কে-খিলাড়ি” ছায়াছবিতে দুটি নৃত্যের ক্রমের জন্য সঙ্গীত রচনা করেন। রেকর্ডে তিনিই পেয়েছিলেন। তিনি ২০০২ সালে দেবদাস উপন্যাসের চলচ্চিত্রের “কাহে ছেদ মোহে” গানটির কোরিওগ্রাফি করেছিলেন। এছাড়া তিনি বেশ কটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নির্ভর ছায়াছবির গানে নৃত্যের নির্দেশনা দিয়েছেন।
![কত্থক কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ [ Kathak Legend Pandit Birju Maharaj passes away, 17th January 2022 ] 5 Pandit Birju Maharaj, পন্ডিত বিরজু মহারাজ](https://glive24.com/wp-content/uploads/2022/01/Pandit-Birju-Maharaj-পন্ডিত-বিরজু-মহারাজ-2-300x225.jpg)
বিরজু মহারাজের প্রতি পুরস্কার এবং সম্মান :
- সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬৪)
- পদ্মবিভূষণ (১৯৮৬)
- শ্রী কৃষ্ণ গণসভা কর্তৃক নৃত্য চূড়ামণি পুরস্কার (১৯৮৬)
- কালিদাস সম্মান (১৯৮৭)
- লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার (২০০২)
- ইন্দিরা কালা সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট
- বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট
- সঙ্গম কালা পুরস্কার
- ভারত মুনি সম্মান
- অন্ধ্ররত্ন
- নৃত্য বিলাস পুরস্কার
- অধর্শীলা শিখর সম্মান
- সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার
- জাতীয় নৃত্য শিরোমণি পুরস্কার
- রাজীব গান্ধী জাতীয় সদ্ভাবনা পুরস্কার
![কত্থক কিংবদন্তি বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ [ Kathak Legend Pandit Birju Maharaj passes away, 17th January 2022 ] 6 Pandit Birju Maharaj, পন্ডিত বিরজু মহারাজ](https://glive24.com/wp-content/uploads/2022/01/Pandit-Birju-Maharaj-পন্ডিত-বিরজু-মহারাজ-8-300x247.jpg)
বিরজু মহারাজের প্রতি চলচ্চিত্র পুরস্কার :
- উন্নাই কানাথু (বিশ্বরূপম) এর জন্য শ্রেষ্ঠ কোরিওগ্রাফির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০১২)
- মোহে রং দো লাল (বাজিরাও মাস্তানি) এর জন্য শ্রেষ্ঠ কোরিওগ্রাফির জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (২০১৬)
বিরজু মহারাজের মহাপ্রয়াণ :
বিরজু মহারাজ অদ্য ১৭ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে ৮৩ বছর বয়সে, দিল্লিতে তার বাসভবনে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন: