কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক তীব্র সংঘাতের অবসানের পর এবার চীন সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর এক সপ্তাহ পর, সোমবার তিনি তিন দিনের সরকারি সফরে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসলামাবাদ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে দারের বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার চলমান আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সর্বশেষ অবস্থা এবং পারস্পরিক আগ্রহের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করবেন দুই দেশের মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলের শেষদিকে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এক ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। নয়াদিল্লি এই হামলার জন্য ইসলামাবাদ সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।
উল্লেখ্য, কাশ্মীর অঞ্চলটি নিয়ে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। উভয় দেশই পুরো অঞ্চলটিকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।
সাম্প্রতিক সংঘাতের মধ্যে ৭ মে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। এরপর চার দিন ধরে চলতে থাকে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবারুদের পাল্টাপাল্টি হামলা। এই লড়াইয়ে দুই পক্ষের ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন।
সংঘাত শুরুর পরপরই আন্তর্জাতিক মহল উভয় দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়। চীন তখন জানায়, তারা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ রাখবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিং দৃশ্যত পাকিস্তানের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন, যারা প্রায়ই দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাশে দাঁড়ায়।
৭ মে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে ইসহাক দার জানান, আকাশযুদ্ধের সময় ইসলামাবাদ চীনা যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করেছে। ওই সময় চীনের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে অবহিত হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেই যুদ্ধবিরতি এখনও কার্যকর রয়েছে। পাকিস্তান বলছে, যুদ্ধবিরতি আপাতত রোববার পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই চুক্তির নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।