
কালরাত স্মরণে আজ রাতে বাতি নিভবে, জাতীয় গণহত্যা-দিবস’ বা বাঙালি গণহত্যা স্মরণ দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নির্মম গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে দিবসটি পালন করা হয়। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কালরাত স্মরণে আজ রাতে বাতি নিভবে
এক মিনিটের জন্য বাতি নিভিয়ে কালরাত স্মরণ করবে বাংলাদেশ। ২৫ মার্চ গণহত্যা-দিবসের জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছ। কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৫০ বছর আগে পাকিস্তানি বাহিনীর যে নির্মমতার শিকার হয়েছিল বাংলার মানুষ, বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী । তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যা এ বছরই ৫০ বছর পূর্ণ করল।

২৫ মার্চ বাংলাদেশে গণহত্যা-দিবস হিসেবে পালিত হয়। সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, গণহত্যা-দিবসে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা যাবে। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাক আউটের আওতামুক্ত থাকবে।
গণহত্যা-দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই দিনকে গণহত্যা-দিবস হিসেবে পালন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।’ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।’
আলাদা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে বিশ্বের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করি একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের, যাঁদের তাজা রক্তের শপথ বীর বাঙালির অস্ত্র ধারণ করে স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৫ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিন। সেদিন সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। রাত সাড়ে ১২টায় পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাংক নিয়ে “অপারেশন সার্চলাইট”–এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যার আনন্দে মেতে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ও রাজারবাগে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে।
‘রাত ১টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। এর অব্যবহিত আগেই জাতির পিতা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান, “ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও”, যা প্রথমে ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রচার করা হয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গণহত্যা দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখব।’
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক অপারেশন সার্চলাইটে নিহত ও আক্রান্তদের স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫শে মার্চকে “গণহত্যা দিবস” হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
আরও দেখুনঃ
- ৭৫-এর পর সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
- বিএনপির অনেক নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে আসেন : কাদের
- খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য মার্কিন সরকারের সহযোগিতা কামনা
- কাল জাতীয় শোক দিবস : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদত বার্ষিকী
- নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন : ওবায়দুল কাদের
- ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী আজ