জনবৃদ্ধি : বিশ্বের আতঙ্ক [ Population growth: World panic ] – আহমদ শরীফ [ Ahmed Sharif ] : জনসংখ্যা আজো গণনাতীত না হলেও এর দ্রুতবৃদ্ধি বিশ্ব-সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য বৃদ্ধির হার সর্বত্র সমান নয়। প্রাকৃতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থনীতিক মান ও অবস্থান অনুসারে আনুপাতিক তারতম্য রয়েছে। তাই এ সমস্যা এখনো আঞ্চলিক, দৈশিক বা রাষ্ট্রিক সীমা অতিক্রম করে বিশ্বমানবিক সমস্যা হিসেবে গুরুতর হয়ে ওঠেনি। সেজন্যই এ সমস্যা আলোচনার বিষয় হলেও আন্তরিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে জন্মনিরোধ প্রয়াসাদি আজো রাষ্ট্রসমূহের পর্যায়ে রয়ে গেছে – বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত হয়নি। কাজেই এখনো কোথাও গাণিতিক হারে, কোথাও জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে।
আগেও মানুষের প্রজননশক্তি এমনিই ছিল। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এত উচ্চ ছিল না। কারণ প্রসূতি ও সন্তান বাঁচানো দুষ্কর ছিল। মানুষের অজ্ঞতা ছিল তখন প্রায় পর্বতপ্রমাণ। অজ্ঞতার সমুদ্রবেষ্টিত হয়ে মানুষ জ্ঞানের ক্ষুদ্রদ্বীপে নিবদ্ধ ছিল। প্রকৃতি তখনও বশীভূত হয়নি। সর্বপ্রকার প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ প্রকৃতির দয়ার ওপর আত্মসমর্পণ করে ভয়-ত্রাস-আশার মধ্যে বাঁচত। রোগ ছিল, কিন্তু রোগের প্রতিষেধক জানা ছিল না। আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক শক্তি নির্ভরতায় তারা দ্বিধা শঙ্কা-আশ্বাসের এক মিশ্র অনুভূতিতে অতিপ্রাকৃত প্রবোধ খুঁজত। তুকতাক, দারুটোনা, ঝাড়ফুঁক, উচাটন কিংবা দোয়া-মন্ত্রের তাবিজ কবজ-মাদুলী অথবা স্থূল দ্রব্যগুণ-নির্ভর চিকিৎসাই ছিল রোগে বিপদে তাদের অবলম্বন।
সব রোগ ও রোগের কারণ জানা ছিল না। সব রোগই প্রায় দেবতা উপদেবতা ও অপদেবতার কুদৃষ্টি ও ক্রোধের প্রভাব বলেই মনে করা হত । তাই পূজা-শির্নি-প্রার্থনার মাধ্যমে দেবতার তুষ্টিসাধনের চেষ্টাই ছিল চিকিৎসা ছিল গৌণ। আজো অনুন্নত দেশের অশিক্ষিত মানুষেরা কলেরা মুখ্য, বসন্ত-প্ল্যাগ প্রভৃতিকে অপদেবতার প্রকোপ-প্রসূত বলেই জানে। মহামারী মাত্রেই ক্ষুব্ধ। ও দুষ্ট দেবতার প্রতিহিংসাপরায়ণতা বলেই তাদের ধারণা। কাজেই তাদের কাছে।
বাঁচাটা দৈবানুগ্রহ এবং মরাটা দৈবনিগ্রহ। একবার মহামারী লাগলে গাঁ উজার হয়ে যেত। সমসংখ্যক মানুষ সৃষ্টি করতে। আবার বিশ ত্রিশবছর লেগে যেত। অবশ্য মধ্যে আবার কলেরা-বসন্ত-প্ল্যাগের প্রাদুর্ভাব দেখা না-দিলে তবে তা সম্ভব হত। কিন্তু এমন সৌভাগ্য তাদের জীবনে কুচিৎ দেখা গেছে। একারণেই পৃথিবীর আদিম গোত্রগুলোর অধিকাংশই লোপ পেয়েছে। আজো অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড-আমেরিকার আদিম পদ্ধতির জীবনযাত্রী আদিবাসীরা লোপ পাচ্ছে।
আবার আগেকার কাড়াকাড়ির যুগে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হানাহানি প্রায় প্রাত্যহিক ঘটনাই ছিল। গোত্রীয় দ্বন্দ্ব-লড়াই ছাড়াও ব্যক্তিক বিবাদও হানাহানিতে পরিণতি পেত। তাতেও মরত অনেক মানুষ। তাছাড়া অনাহারক্লিষ্ট ও রোগজীর্ণ-দরিদ্র ঘরে আজো মৃত্যুর হার অধিক। আজো অশিক্ষিত দরিদ্র ঘরে যত শিশু জন্মায় তার অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশই বেঁচে থাকে। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেও ম্যালেরিয়া-কালাজ্বর-প্লীহা-যক্ষা সূতিকা কলেরা-বসন্তে লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের দেশেও মারা যেত।
১৭৭০-এর দশকে রাজস্ব নিরূপণের প্রয়োজনে ওয়ারেন হেসটিংস-এর নির্দেশে চট্টগ্রাম শহরের চারদিকের চারটে গাঁয়ের মানুষের চারবছরের জন্ম-মৃত্যুর হার নিয়ে দেখা গেছে, কোনো গাঁয়ে পাঁচ-দশজন বেড়েছে এবং কোনো গাঁয়ে কমেছে এবং গড়ে প্রায় স্থিরই ছিল।
আজকাল যক্ষ্মা বহুমূত্র-ক্যানসার-আল্সার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ-হৃৎরোগ প্রভৃতি মারাত্মক ব্যাধিরও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে অকালে মৃত্যু পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেছে। আগে বাঁচাই ছিল দুঃসাধ্য দৈব ব্যাপার, এখন মরাটাই হচ্ছে দুর্ঘটনা। বস্তুত দুর্যোগ-দুর্ঘটনা এবং যুদ্ধ ছাড়া এযুগে অকালে মৃত্যুর এলাকায় পৌঁছা প্রায় অসম্ভব। তাই পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র চক্রবৃদ্ধিহারে বা জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। এক শতকের মধ্যেই কোথাও জনসংখ্যা দ্বিগুণ-আড়াইগুণ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব সমস্যা ভয়ঙ্করভাবে গুরুতর।
আদ্যিকালেও সভ্যতর সমাজে অর্থাৎ জীবন-জীবিকা পদ্ধতি যাদের উন্নততর ছিল এবং টোটকা চিকিৎসাবিদ্যা যাদের আয়ত্তে এসেছিল, সেই উন্নত সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেদিন তাদেরও সামনে তা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। সেদিনও অজ্ঞ মানুষের পক্ষে তার সমাধান সহজ ছিল না। তখন অবশ্য বিস্তৃত ভুবন ফাঁকা পড়েছিল, কিন্তু যানবাহন ও হাতিয়ারের অভাবে অপটু মানুষের পক্ষে তখনও তা দুর্গম দুর্লঙ্ঘ্য। তাছাড়া সেদিনও মানুষ স্বার্থপর ও ঈর্ষাপরায়ণ ছিল। কাজেই সেদিনও বিরুদ্ধ পক্ষের সঙ্গে সংগ্রাম করে করে অগ্রসর হতে হয়েছে। মানুষের আত্মবিস্তারের ক্ষেত্রে গোত্রীয় সংগ্রামের যুগ দীর্ঘস্থায়ী ছিল। সেই প্রাকৃতিক যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ নীতি অনুযায়ী প্রবল শক্তি দুর্বলকে উচ্ছেদ করে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মবিস্তার করত।
তবু যতই দুর্গম-দুর্লঙ্ঘ্য হোক, বেঁচে থাকার গরজে জীবনের চাহিদা পূরণের জন্যই মানুষকে সেদিনও মরিয়া হয়ে এগিয়ে যেতে হত। তাই দেখতে পাই, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তারা আফ্রিকার উত্তর উপকূলে, ভারতে ও অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল। এমনকি সুদূর অস্ট্রেলিয়া অবধি বিপদসঙ্কুল পাড়ি জমিয়েছিল। আবার এমনি সমস্যার সমাধানমানসে। মধ্যএশিয়ার আর্যরা এশিয়া-যুরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং মঙ্গোলীয়রা পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার ফিলিপাইন অবধি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
ঐতিহাসিক যুগেও আমরা মধ্যএশিয়ার শক-হূন-ইউচি-কুশানদের প্রবল পরাক্রমে চারদিকে বেরিয়ে পড়তে দেখেছি। যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিংবা অনাবৃষ্টির জন্য খাদ্য ও চারণ ভূমির অভাব দেখা দিয়েছে, তখনই প্রাণের দায়ে বাঁচবার তাগিদে তারা আরবে, ইরানে, ভারতে, চীনে, রাশিয়ায় ও বলকান অঞ্চলে পরাক্রান্ত শক্তি রূপে বিজয়ীবেশে প্রবেশ করে আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রতিষ্ঠা করেছে। এই সেদিনও তুর্কি-মুঘলের দাপটে এশিয়া বারবার প্রকম্পিত হয়েছে—বিধ্বস্ত হয়েছে কত নগর-জনপদ।
এটিলা, চেঙ্গিস, হালাকু, কুবলাই, তৈমুর তাদের প্রাণের পোষক বলেই তাদের জাতীয় বীর। তারা জানত সামনেই তাদের জীবনের আশ্বাস, পশ্চাতে মৃত্যুর বিভীষিকা। তাই তাদের তুরঙ্গগতি ছিল অপ্রতিরোধ্য, বিজয়ীর গৌরবই ছিল তাদের প্রাপ্য; পরাজয়ের কলঙ্ক তাদের ললাটে কখনো লিখিত হয়নি। এরাই বুঝি কুরআনের এয়াজুজ-মাজুজ! এদের ভয়ে নির্মিত চীন-ককেসাসের দুর্ভেদ্য প্রাচীরও কখনো রোধ করতে পারেনি এদের অগ্রগতি।
পনেরো-ষোলো শতকের য়ুরোপে এমনি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যাই মানুষকে নীল সমুদ্রে পাড়ি দেয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিল। পনেরো শতকের শেষ দশক থেকে উনিশ শতক অবধি নতুন ভুবন সন্ধানে অভিযাত্রীদের অবচেতন প্রেরণার উৎসই ছিল এই বাঁচা ও স্বজনকে বাঁচাবার তাগিদ। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফ্রিকার দুর্গম জঙ্গল আবিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের ক্ষুধা মেটেনি। তারপরেও য়ুরোপবাসীরা দুর্ধর্ষ শক-হুন-মোঙ্গলদের মতোই দুনিয়ায় দু-দুটো প্রলয়কাণ্ড ঘটিয়েছে।
তারা রাহুর মতোই এশিয়া-আফ্রিকা গ্রাস করেছিল, আর জোঁকের মতো করেছে শোষণ। নতুন ভুবনে প্রাপ্ত ঐশ্বর্যে গত পাঁচশ বছর ধরে য়ুরোপ ধনে-মানে প্রতাপে প্রভাবে পৃথিবীর সেরা হয়ে রয়েছে। শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রে অবাধ প্রবেশাধিকার আছে বলে এবং দু-দুটো মহাযুদ্ধ ঘটে গেল বলে য়ুরোপে লোকবৃদ্ধি আজো বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। কাজেই লোকবৃদ্ধির এ সমস্যা বিশেষভাবে এশিয়ার।
কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন: আকাশ ও পৃথিবীর সব ব্যক্ত ও গুপ্ত সম্পদ আমি মানুষকে তার ভোগের জন্য দিয়েছি। বৈজ্ঞানিক আবিক্রিয়াই এই গুপ্ত সম্পদ/ফলে আমাদের যে যন্ত্রনির্ভর জীবন চালু হয়েছে তার বিকাশ-সম্ভাবনা কল্পনাতীতরূপে অপরিসীম। বিজ্ঞানবুদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপ্রয়োগে মানুষের খোর-পোষের ক্রমবর্ধমান সমস্যার সমাধান করা হয়তো সম্ভব। যেমন বাসস্থানের সংস্থান হতে পারে স্কাই ফ্লেপার তৈরি করে, খাদ্যসমস্যার সমাধান হতে পারে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য-বস্তুর তাছাড়া গণমানবের মানসবিকাশের সাথে সাথে তার প্রয়োজন, বৃদ্ধি ও চাহিদা বাড়ছে, সে আর এখন কেবল উদরসর্বস্ব নয়। তাই উদর পূর্তিতেই তার সমস্যা মিটে না। তার স্বাচ্ছন্দ্য-চেতনা ও রুচি তার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা বৃদ্ধি করছে এবং তা লোকবৃদ্ধি সমস্যাকে জটিল ও গুরুতর করে তুলছে।
স্বতন্ত্রভাবে আজকাল প্রায় রাষ্ট্রই প্রতিকার-পন্থা উদ্ভাবনে তৎপর। জন্মনিরোধের মাধ্যমে জনসংখা নিয়ন্ত্রণ তার মধ্যে প্রধান। কৃষিজাত ও শিল্পজাতদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রভৃতিও এ প্রচেষ্টার অন্তর্গত। কিন্তু আজকের সংহত পৃথিবীতে স্বতন্ত্র ও খণ্ড প্রয়াসে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে হয় না। বিশ্বব্যাপী যৌথ প্রয়াসে এর অন্তত আপাত সুব্যবস্থা সম্ভব। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, একে দৈশিক বা রাষ্ট্রিক সমস্যা হিসেবে অবহেলা করা যাবে না। এটিকে বিশ্বের গুরুতর মানবিক সমস্যা রূপে প্রত্যক্ষ করতে হবে। শুনেছি জাপানে জন্মহার স্বল্প।
কিন্তু ভারতে ব্রাজিলে বিপুল। এতে সামগ্রিকভাবে সমস্যার কোনো হ্রাসবৃদ্ধি হয় না এবং মানুষের প্রতি প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য রয়েছে মানুষকে ভালোবেসে তার দুঃখ-অভাব মোচন করতে হবে—– এই নীতিবাক্য উচ্চারণেও সমস্যার সমাধান হবে না। কেননা মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর। কিছুটা বৈধ-বাধ্যবাধকতার ব্যবস্থা না হলে মানবিক সমস্যার সমাধান অসম্ভব।
আমাদের ধারণায় পৃথিবী অন্তত আরো এক শতাব্দীকাল অনিয়ন্ত্রিত মানুষের ভরণপোষণে সমর্থ। কেননা আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে এখনো অনাবাদী ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে। তাছাড়া মানুষের বিজ্ঞান বুদ্ধি ও উদ্ভাবন-শক্তিতে আমরা আস্থাবান। কিন্তু রাষ্ট্রসমূহের সবুদ্ধি ও বিশ্বমানবের সামগ্রিক কল্যাণচিন্তা ব্যতীত লোকবৃদ্ধিজাত সমস্যার সমাধান প্রয়াস ফলপ্রসূ হবে না এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পাবে। কেননা অভাব থেকেই বিবাদের উৎপত্তি। ঘরে-সংসারে দেখা যায় পরিবারের পোষ্য সংখ্যার অনুপাতে আয় না থাকলেই অশান্তি ও কোন্দল শুরু হয়। রাষ্ট্রিক জীবনেও তাই ঘটে। লোকবৃদ্ধির সাথে সাথে লোকের প্রয়োজন পূরণের আয়োজনে সমতা রক্ষা করতে না পারলে বিদ্রোহ-বিপ্লব-আন্দোলন দেখা দেয়। এগুলো তো অভাব বোধ ও দারিদ্র্য-যন্ত্রণার অবশ্যম্ভাবী প্রসূন।
কম্যুনিজম, সোস্যালিজম, ঔপনিবেশিকতা প্রভৃতি তো এই অভাব ও দারিদ্র্যের সন্তান। অর্থাৎ জনগণের অভাব ঘুচানোর উপায়রূপে সব মতবাদ উদ্ভাবিত। আজ সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ লুপ্তপ্রায় এবং পুঁজিবাদ হয়েছে ঘৃণ্য। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মাধ্যমে যদি দুটো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তাহলে এক শতাব্দীর জন্য এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক. পৃথিবীব্যাপী আনুপাতিক সমতায় লোক ও খাদ্য বণ্টন (equitable distribution of population and food ), আর দেশরক্ষার প্রয়োজনে অনুৎপাদক (unproductive) অস্ত্র নির্মাণ-ক্রয় ও সৈন্যবাহিনীর বিলোপসাধন। রাষ্ট্রসঙ্ঘই সারা দুনিয়ার রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে গঠিত একটি সৈন্যবাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে।
জানি, আমাদের এ চিন্তা বিষয়ী লোকের উপহাসের বস্তু। তবু কি একান্তই দিবাস্বপ্ন—নিতান্তই আকাশকুসুম!
[ জনবৃদ্ধি : বিশ্বের আতঙ্ক – আহমদ শরীফ ]
আরও পড়ুন: