দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ

0
33
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বাংলাদেশী ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য; যাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে সাহায্য করার অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে-আমির বা ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার এবং ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ

 

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ

 

২০১১ সালে সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার বিরূদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজ ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০ দফা অভিযোগ আনা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০টি অভিযোগের মধ্যে প্রদত্ত বিচারের রায়ে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং দু’টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।

তার ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সহিংসতা শুরু করেছিল। এই রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিলের রায় পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমিয়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করে।

প্রারম্ভিক জীবন

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইউসুফ শিকদার গ্রামের খুব সাধারণ এক গৃহস্থ ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় লোকদের কাছে দেলোয়ার শিকদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।

তিনি ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন ও পরবর্তিতে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তরিত হন। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পর সাঈদী স্থানীয় গ্রামে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মুসলমান আলেম বা মওলানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারে তাকে ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে মানবাতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। যাইহোক, তার পুত্র মাসঊদ সাঈদীর মতে তিনি ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে ছিলেন না এবং ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি যশোরে বসবাস করছিলেন। সাঈদী বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও তার দক্ষতা রয়েছে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতা-যুদ্ধ শুরু হয়। ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে হাজার হাজার নিরীহ বাংলাদেশীকে সেই রাতে হত্যা করে যা ইতিহাসে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা পায়। দেলওয়ার হোসেন সাঈদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেন।

তিনি সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার দায়ে অভিযুক্ত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাহায্যার্থে সে সময় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী গঠন করা হয়, আধাসামরিক বাহিনী রাজাকারের সক্রিয় সদস্য হিসেবে সাঈদীর বিরোদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও জোড়পূর্বক সংখ্যালঘু হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেতিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয়ভাবে ‘দেইল্যা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যাই হোক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার আইনজীবী তার পক্ষে বলেন, ১৯৭১ সালের দেলওয়ার হোসাইন শিকদার ওরফে ‘দেইল্যা রাজাকার’ এক ব্যক্তি নন; কুখ্যাত ‘দেইল্যা রাজাকারকে’ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেন ও হত্যা করেন। এর পূর্বে যুদ্ধাপরাধের অপর একটি মামলায় তার দল জামায়াতে ইসলামীর আরেক নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষেও একই কথা বলা হয়েছিল যে, কাদের মোল্লা ও ‘কসাই কাদের’ একই ব্যক্তি নন। উল্লেখ্য যে, আদালতের রায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

 

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ

 

রাজনৈতিক জীবন

১৯৮০’র দশকের প্রথমদিকে সাঈদী সাড়াদেশব্যাপী ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন এবং তার সুন্দর বক্তব্য দানের ক্ষমতার জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন; এ সময়ই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনী জোট গঠন করে এবং তিনি এই নির্বাচনে পুনরায় জাতীয় সংসদ-এর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আরও দেখুনঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here