
প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে: বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অন্তর্ভুক্তিমুলক উন্নয়নের প্রস্তাব করেছে। এসডিজির গুরুত্বপুর্ণ ধারণাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার। প্রযুক্তি শুধু তথ্য ও সেবা প্রাপ্তিকেই সহজ করেনা-স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রও প্রসারিত করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘সিপিডি গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ প্রকল্পের আওতায় ‘জেন্ডার সমতা’ ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকারি পরিসেবার ভুমিকা’ শিরোনামে একটি গবেষণা করেছে। সেখানে জেন্ডার গ্যাপ বা লিঙ্গ বৈষম্যের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
শতবর্ষ আগেই বেগম রোকেয়া বলে গেছেন, মানব সমাজ একটি দুই চাকার সাইকেলের মতো। সমাজ এগিয়ে যায় সেই দুই চাকার ওপর ভর করেই। কিন্তু এক চাকাকে দুর্বল রেখে কিংবা অচল রেখে শুরু অপর চাকার ওপর নির্ভর করে খুব বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যাবেনা। প্রযুক্তি দুনিয়ায় এ কথা আরো বেশি সত্য। যেমন রংপুরের গঙ্গাচড়ার ইয়াসমিন আকতারের (২০) কথাই ধরুন। তার কাছে এখনো ডিজিটাল বাংলাদেশের আধুনিক প্রযক্তি বিজ্ঞান পৌঁছেনি। তিনি চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারের সন্তান। প্রযু’ক্তির কোন প্রশিক্ষণ পাননি। কম্পিউটারের ব্যবহার, ইন্টারনেটের ব্যবহার ইত্যাদির কিছুই জানেন না।
একইভাবে বলা যেতে পারে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মরিয়ম আক্তারের (২২) কথা। তিনিও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করলেও প্রযু’ক্তির ব্যবহার তেমন শিখতে পারেন নি। কুড়িগ্রামের চিলমারির বাসিন্দা রোকেয়া (৩২), রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার রাহেলা খাতুন(২৯) চরাঞ্চলের এ রকম হাজারো তরুণী প্রযুক্তির জ্ঞান থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন। প্রযুক্তির সুফল জাতিগতভাবে পেতে হলে দেশের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের আগ্রহ, দক্ষতা ও এতে অভিগম্যতা থাকা জরুরী। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে- গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ১৫-২৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শহরাঞ্চলে এই হার কিছুটা (২০ শতাংশ) বেশি।

শহর ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী তরুণদের মধ্যে ৮০ শতাংশের নিজেদের ফোন রয়েছে, সেখানে তরুণীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের যুব শক্তির অর্ধেক অংশ নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট অভিজ্ঞতার হার অনেক কম। এই হার প্রথমত পুরুষদের তুলনায় যেমন কম, তেমনি শহরাঞ্চলে বসবাসকারী নারীদের তুলনায় গ্রামাঞ্চলেও অনেক কম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলোজির(বিডব্লিউআইটি) চেয়ারপারসন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস ও মেকাট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামান বলেন,‘ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ^ব্যাপীই প্রযু’ক্তিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম। তবে আশার কথা হচ্ছে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে এ অংশগ্রহণ শহরকেন্দ্রিক।
গ্রামাঞ্চলে এ সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এসডিজির লক্ষ্য পুরণে মেয়েদের কারিগরি জ্ঞান বাড়ানোর পাশাপাশি তাদেরকে প্রযুক্তিভিত্তিক আয়ের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। করোনা অতিমারির সময় আমরা দেখেছি, মেয়েরা এফ কমার্সের মাধ্যমে আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু এফ কমার্স নয়, ই-কমার্সে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।’ দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পুরনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ভুমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে হবে ।
এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারী খাতের নানা সেবা ডিজিটালাইজড হয়েছে, অন্যান্যগুলোও হওয়ার পথে। যারা প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, তারা এর সুবিধাভোগী হবে এবং বাকিরা পিছিয়ে পড়বে। এই অবস্থায় এসডিজিতে বর্ণিত অন্তর্ভুক্তিমুলক উন্নয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবেনা। তাই যাবতীয় উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের সুফল পেতে হলে আমাদের দেশের প্রাণ যে যুবশক্তি, তাকে এ বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
দেশের সব অঞ্চলে ও সব মানুষের কাছে প্রযুক্তিকে সমানভাবে সহজলভ্য ও ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হবে। এ জন্য প্রযু’ক্তিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শ যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও ইন্টারনেট সেবা সব মানুষের কাছে সুলব করে তোলা। প্রযু’ক্তিকে নারীর জন্য নিরাপদ তথা নারীবান্ধব করে তোলাও জরুরী। প্রযু’ক্তির ব্যবহারে জনগোষ্ঠীর সবাইকে উৎসাহী ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে সব মানুষের জীবন-যাত্রার মানউন্নত হবে, যা এসডিজি বাস্তবায়নে জোরালো ভুমিকা রাখবে।
আরও দেখুনঃ
- ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের প্রত্যাশা সওজের
- প্রধানমন্ত্রী: আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চায়
- নারীরা হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা সরকারের সহায়তায়
- প্রধানমন্ত্রী: আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে
- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পদ্মাসেতু জাদুঘর নির্মাণের, একনেকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন