Home সকল মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের

মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের

0
মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের

মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগেরঃ এক ঝলকে ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়, রাতের আকাশের ছবি। কারণ, সেই ছবিতে অনেক তারার উপস্থিতি চোখে পড়ে। কিন্তু এই ছবিটি রঙিন। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা যে ছবি দেখি, তাতে লাল রঙের এত কিছু দেখা যায় না! কখনো কখনো শুধু রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহকে লালচে রঙের দেখা যায়!

 

মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের

 

মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের
আমাদের চোখে দেখা রাতের আকাশের ছবি নয়। ছবিটি প্রকাশ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, বহির্বিশ্বের এখন পর্যন্ত যত ছবি তোলা হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে গভীর, তীক্ষ্ণ ও পরিচ্ছন্ন ইনফ্রারেড ছবি।

 

গতকাল এটি প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ছবি উন্মুক্ত করেন। গত রাতে জেমস ওয়েবের তোলা আরও চারটি ছবি প্রকাশ করার কথা রয়েছে। যত দূর জানা যায়, এর শুরু আজ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে। আর গতকাল নাসার প্রকাশ করা ছবিটি হলো সেই সময়কার মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশের ছবি।

ছবিটি তোলা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহত্তম টেলিস্কোপের সাহায্যে। পৃথিবী থেকে যত দূরে চাঁদ, তার চার গুণ দূরত্বে এই টেলিস্কোপে ছবিটি তোলা। নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির বানানো জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ গত সপ্তাহে এই ছবি তুলেছে।

প্রায় ১০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন=১০০ কোটি) ডলারের এই টেলিস্কোপ তৈরি করা হয়েছে দূর মহাকাশে, মহাবিশ্বের শুরুর দিকে গ্যালাক্সি সৃষ্টির সময়কে দেখার জন্য। বিগব্যাংয়ের মহাবিস্ফোরণের সঙ্গে সূচনা এই মহাবিশ্বের। কিন্তু সৃষ্টির কিছুকাল পরই সৃষ্ট কণা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ও ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যায়, মহাবিশ্বজুড়ে নেমে আসে অন্ধকার।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

কিন্তু ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা হাইড্রোজেন, হিলিয়াম কণা এবং ধুলা কাছাকাছি হতে থাকলে একসময় মহাকর্ষ বল সেগুলোকে একত্র করে ঘনীভূত করে। এর ফলে সৃষ্ট তাপে হাউড্রোজেন জ্বলতে থাকে। সৃষ্টি হয় প্রথম প্রজন্মের তারা। আর তা থেকেই আসে প্রথম আলো। তারাকে ঘিরে শুরু হয় গ্যালাক্সি (তারামণ্ডল) সৃষ্টির কর্মযজ্ঞ। ১০০ বছর আগে বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের হাত ধরে আমরা জানি, সৃষ্টির পরপরই গ্যালাক্সিগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আর তাতে মহাবিশ্ব ক্রমাগত আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে জানাচ্ছেন, এই সম্প্রসারণের কারণে দূর থেকে আমাদের দিকে যে আলো আসে, সেটির তরঙ্গদৈর্ঘ্যও ক্রমাগত বেড়ে যায়। এতে নীল রঙের আলো ক্রমাগত লাল রঙের আলোতে পরিণত হয়।

তা ছাড়া গ্যালাক্সির চারপাশে যে ধুলারাশি, সেগুলো চোখে দেখার আলোকে শুষে নিয়ে অবলোহিত (ইনফ্রারেড) আলো বিকিরণ করে। এ জন্য দূর মহাকাশের মহাজাগতিক বস্তু দেখার জন্য এমন নভোদুরবিন বা স্পেস টেলিস্কোপ দরকার, যা এই অবলোহিত আলোতে কাজ করে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এমন আলোতে কাজ করে। প্রায় ২৫ বছর সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের অর্থায়নে কয়েক হাজার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর চেষ্টায় গত বছরের শেষের দিকে এই টেলিস্কোপ মহাকাশে স্থাপন করা হয়েছে।

এর পিছে আছেন বাংলাদেশিও

 

মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের
লামীয়া আশরাফ মওলা

 

কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির হয়ে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর একটি দল কাজ করছে এই ছবি তোলা ও বিশ্লেষণে। সেই দলেরই সদস্য ঢাকার শান্তিনগরে বেড়ে ওঠা ও উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লামীয়া আশরাফ মওলা। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্যোতির্বিদ্যায় পিএইচডি করার পর লামীয়া বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর ডানলপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসে পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন।

নাসা থেকে ছবি প্রকাশের পর উচ্ছ্বসিত লামীয়ার সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। লামীয়া বলেন, ‘পিএইচডি গবেষণার সময় হাবল টেলিস্কোপ নিয়ে কাজ করেছি। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল জেমস ওয়েবে কাজ করার। সেই সুযোগই পেয়েছি।’

জানতে চাইলাম, জেমস ওয়েবের ক্যামেরা বর্ণালির অবলোহিত অংশে কাজ করে, যা আমরা সাদা চোখে দেখতে পাই না। কিন্তু এ ছবির রং তো দৃশ্যমান?

উত্তরে লামীয়া বলেন, ‘আমাদের চোখে দৃশ্যমান করতে নভোদুরবিনের ছবির সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে ‘লাল’, মাঝেরটিকে ‘সবুজ’ ও সবচেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘের আলোকে ‘নীল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাতেই ছবিটি আমাদের জন্য দৃশ্যমান হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছে।’ লাল-সবুজ-নীলের তারতম্যে যেকোনো ছবি রঙিন হয়ে ওঠে।

লামীয়া বলেন, ‘এই ছবিতে যে উজ্জ্বল সাদা আলো, সেগুলো আমাদের ছায়াপথের তারা। আর দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোকে এখানে দেখা যাচ্ছে লাল/লালচে হিসেবে। সবচেয়ে কাছে যে গ্যালাক্সি সেটি ৪৬০ কোটি আলোক বছর দূরের। আর দূরেরগুলো প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোক বছর দূরের।’

নাসার হিসাবে আপনি যদি আপনার হাতের তর্জনীর ওপর একটি বালুর কণা রেখে বাহুটিকে আকাশের দিকে প্রসারিত করেন, তাহলে বালুর কণাটি আকাশের যেটুকু স্থান ঢেকে রাখবে, ঠিক সেটুকু স্থানের ছবি এটি। সেখানে প্রায় ১০ হাজার গ্যালাক্সি রয়েছে।

 

মহাকাশের ছবি তাও আজ থেকে ১৩০০ কোটি বছর আগের

 

নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক, সবার জন্য জ্যোতির্বিদ্যা বই-এর সহলেখক, জ্যোতির্বিদ সৈয়দা লামমীম আহাদ এই মুহূর্তে রয়েছেন জার্মানির মিউনিখ শহরে। সেখানে ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরিতে মিলিত হয়েছেন ইউরোপের সম্মুখসারির জ্যোতির্বিদেরা। লামমীম প্রথম আলোকে জানান, মহাকাশের যে কটি অঞ্চলে গ্যালাক্সির ঝাঁক বেশি, এটি তার একটি।

লামমীমের মতে, এই ছবিতে আইনস্টাইনের জানানো মহাকর্ষীয় লেন্সের ব্যাপারটি খুবই সহজে দেখা যায়। ছবিতে কিছু লাল আলোকে দেখা যাচ্ছে কিছুটা স্থানজুড়ে। ছবির মাঝখানে ঘোলাটে অংশটি এই গ্যালাক্সি ঝাঁকের কেন্দ্রের একটি অতিভরের গ্যালাক্সি। এটির ভরের কারণে আশপাশের স্থান-কাল বেঁকে মহাকর্ষীয় লেন্স তৈরি করেছে। এর ফলে ওই গ্যালাক্সির পেছনের গ্যালাক্সির আলো বেঁকে গিয়ে এমনটা হয়েছে।

লামমীমের ধারণা, জেমস ওয়েবের উন্নত ক্যামেরা ও স্পেকট্রোস্কপির কারণে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়কাল সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে শুধু দূর মহাকাশ নয়, যেসব স্থানে তারার চারপাশে গ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে, সেটিরও বিস্তারিত জানা যাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ হাবল দুরবিনের পর মহাকাশে স্থাপিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

কারণ, এই টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ পরিসর হাবলের চেয়ে বেশি। এর মাধ্যমে আমরা আরও অতীতের ও আরও দূরবর্তী মহাজাগতিক বস্তু ও ঘটনা সম্পর্ক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পারব। মহাকাশবিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে এতে নিঃসন্দেহে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।’

আরও দেখুনঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here