
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট ইতিহাস শেষ কোথায়, ইউক্রেনে রুশ হামলা তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করছে। শিগগিরই এ যুদ্ধ থামবে, সে কথা ভাবার কারণ নেই। বরং যুদ্ধ আশপাশের দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বাড়ছে হতাহত বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা, বাড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে উদ্বাস্তু মানুষ।
দুটি প্রধান সামরিক ও কৌশলগত লক্ষ্য সামনে রেখে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এক. দেশটির ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণ ঠেকানো এবং দুই. সেখানে মস্কোর কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা। সম্ভাব্য সরকারপ্রধান হিসেবে ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের নাম পর্যন্ত বিবেচনায় আনা হয়েছিল।
এ যুদ্ধে রাশিয়ার সহজ জয় হবে ভাবা হলেও বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। সামরিক অভিযান এমন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে যে মস্কো বাধ্য হয়ে তার প্রাথমিক রণকৌশল পরিবর্তন করে বেসামরিক স্থাপনা ও জনপদের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ শুরু করেছে। উদ্দেশ্য, পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করে ইউক্রেনকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করা। এই রণনীতির কারণে পশ্চিমা মহলে এখন খোলামেলাভাবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাঁকে সরিয়ে একটি ভিন্ন সরকার প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হচ্ছে।
Table of Contents
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট ইতিহাস শেষ কোথায়, কীভাবে
পুতিনের তিন ভুল
প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক বা সামরিক কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেননি, বরং তিনি নিজেই প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন। এই ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে তাঁর হিসাবে তিনটি বড় ভুল।
প্রথমত,
পুতিন ভাবেননি ইউক্রেনীয়রা রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে এমন মরণপণ প্রতিরোধ দেখাবে। বলা হয়েছিল ইউক্রেনের অধিকাংশ মানুষ রুশপন্থী, ফলে রুশ সৈন্যরা আসামাত্রই তারা ফুল দিয়ে তাদের বরণ করে নেবে। ফুল নয়, মলোটভ ককটেল দিয়ে রুশ সৈন্যদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ইউক্রেনবাসী।
দ্বিতীয়ত,
পুতিন ভেবেছিলেন, রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ইউরোপ কিছুতেই ওয়াশিংটনের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করবে না। তিনি বিশেষ করে ভরসা করেছিলেন জার্মানির ওপর, রাশিয়ার তেল-গ্যাস ছাড়া যেখানে অনেকের হেঁশেলে আগুন জ্বলে না। তা সত্ত্বেও সেই জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের প্রতি শুধু পূর্ণ সমর্থন দেয়নি, সে দেশে সরাসরি গ্যাস রপ্তানির জন্য বিশেষভাবে নির্মিত নর্ড স্ট্রিম–২ পাইপলাইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে। পাশাপাশি রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলায় নিজেদের সামরিক বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছে ও ইউক্রেনে ভারী অস্ত্র সরবরাহে সম্মত হয়েছে।
তৃতীয়ত,
পুতিন ভেবেছিলেন পশ্চিমের অর্থনৈতিক অবরোধ মোকাবিলা তাঁর জন্য কঠিন হবে না, কারণ বিপদের আশঙ্কা জেনে তিনি পর্যাপ্ত আগাম ব্যবস্থা নিয়েছেন। ক্রিমিয়া দখলের পর ওয়াশিংটন সীমিত আকারে হলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি সাড়ে ছয় শ বিলিয়ন ডলারের বিশাল রিজার্ভ গড়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে সে অর্থের বড় অংশ পশ্চিমা ব্যাংকে, নিষেধাজ্ঞার কারণে তাতে হাত দেওয়ার উপায় নেই।
আর্থিক আদান-প্রদানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় রুবলের দাম পড়ে গেছে, শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। হামলার প্রতিবাদে বড় বড় পশ্চিমা কোম্পানি রাশিয়ায় তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। তদুপরি বিমান যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশটি একঘরে হয়ে পড়েছে। পুতিন ঠিকই বলেছেন, পশ্চিমের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসলে তাঁর দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। শুধু যে কথাটি তিনি বলেননি তা হলো পশ্চিমের এই যুদ্ধ ঘোষণা এসেছে সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে ইউক্রেন আক্রমণের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে।

রাশিয়ার অভিযোগের যৌক্তিকতা
পুতিনের প্রধান দাবি ছিল, তিনি কিছুতেই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে দেবেন না, কারণ এর ফলে রাশিয়ার নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তাঁর দাবি যে যুক্তিহীন নয়, এ কথা পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো নেতা অনুচ্চ কণ্ঠে স্বীকার করা শুরু করেছিলেন। গত মাসে মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সে কথা মেনেও নিয়েছিলেন।
ন্যাটোর সদস্যপ্রাপ্তির একটি পূর্বশর্ত হলো এই প্রশ্নে জোটভুক্ত সব দেশের অভিন্ন মতামত। জার্মানি, হাঙ্গেরিসহ একাধিক দেশ আগে থেকেই বলে আসছে তারা ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদের বিরোধী। এ অবস্থায় কিয়েভ থেকে যতই অনুরোধ করা হোক, বাস্তবতা হলো তার পক্ষে এ জোটের সদস্যপদ লাভের কোনো আশু সম্ভাবনা ছিল না। ন্যাটোর সদস্যপদ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের এ সম্ভাব্য বিভক্তিকে কাজে লাগানোর বদলে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন।
সে আক্রমণের সাফাই হিসেবে পুতিন দাবি করেছিলেন দোনবাস এলাকার রুশ ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়রা গণহত্যায় জড়িত। সত্যি হোক বা না হোক, সে দাবি করে তিনি যদি শুধু দোনবাস দখল করে ক্ষান্ত হতেন, তাহলে হয়তো রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন প্রবল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতো না।
ইউক্রেনের অভ্যন্তরে হামলা চালানোয় এ কথা প্রমাণ হয়ে গেল আসলে রাশিয়াই তার প্রতিবেশীদের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তার হুমকি, ঠিক যে কারণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের আবেদন করেছিলেন। রাশিয়ার এই বেপরোয়া হামলায় ভীত তার দুই প্রতিবেশী ফিনল্যান্ড ও সুইডেন বলছে, তারাও ন্যাটোর সদস্যপদ চায়। এমনকি নিরপেক্ষ সুইজারল্যান্ড এই আক্রমণের প্রতিবাদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।
সমরক্ষেত্রে বিপর্যয়
রাশিয়ার পর ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইউক্রেন, আয়তনে প্রায় আড়াই লাখ বর্গমাইল, মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। এমন বিশাল একটি দেশকে শুধু বোমা ফেলে পরাস্ত করা অসম্ভব। সে জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময় অধিগ্রহণে প্রস্তুত একটি বহুমুখী সামরিক বাহিনীর একটানা উপস্থিতি। তারপরও নতিস্বীকারে প্রস্তুত নয় এমন একটি দেশের মানুষকে পদানত করা অসম্ভব। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বড় রকমের দাম দিয়ে সে শিক্ষা পেয়েছে। এখন ইউক্রেনে সেই একই নাটকের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।
পশ্চিমা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী যে ইউক্রেনে সামরিকভাবে দ্রুত সাফল্য অর্জন করেনি, তার একটি প্রধান কারণ, এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পদাতিক সৈন্যরা মানসিকভাবে আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য প্রস্তুত নয়। যুদ্ধের প্রথম দুই সপ্তাহে ইউক্রেনীয়দের হাতে আটক রুশ সৈন্যরা জানিয়েছেন নিজেদের জ্ঞাতিভাইদের ওপর বন্দুক চালাতে হবে, এ কথা তাঁদের আগে থেকে বলা হয়নি। মনে রাখা ভালো, রাশিয়ার যে সেনাবাহিনী তা বাধ্যতামূলকভাবে দায়িত্বে নিযুক্ত বাহিনী।
দেশের আইন অনুসারে, ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী প্রতিটি সুস্থ ব্যক্তিকে কমপক্ষে এক বছরের জন্য রুশ সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর যে ‘কন্সক্রিপশন’ ব্যবস্থা চালু হয়, তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এই বাধ্যতামূলক কাজের অংশ হিসেবে ইউক্রেন অভিযানে আগত রুশ সৈন্যদের অধিকাংশের বয়স ১৮-২০ বছর, স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়েই তাঁরা বন্দুক তুলে নিয়েছেন। যুদ্ধজয়ের জন্য চাই শত্রুর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ। অথচ ইউক্রেনবাসীর সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক হাজার বছরের, অনেকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের নিকটাত্মীয়। ‘এই যুদ্ধ আমরা চাই না,’ গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা বন্দী রুশ সৈন্যদের একজন কান্না চাপতে চাপতে বলেছেন।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ
রাশিয়ার ভেতরেও প্রতিবাদ বাড়ছে। দেশটিতে কোনো স্বাধীন তথ্যমাধ্যম নেই, সরকারি অনুমোদন ছাড়া তথ্য প্রকাশের সুযোগ কার্যত শূন্য। তারপরও যাতে কেউ টুঁ শব্দটি না করতে সে জন্য নতুন আইন করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ইউক্রেন অভিযানকে যুদ্ধ বা সামরিক অভিযান বলা যাবে না, বলতে হবে বিশেষ সামরিক ব্যবস্থা (স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন)। এ আইন অমান্য করলে ১৫ বছরের জেল ধার্য করা হয়েছে। সে বিপদের কথা জানা সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রতিটি বড় বড় শহরে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি।
যুদ্ধ তাদের পরিকল্পনামতো এগোচ্ছে না, সে কথা মেনে নিয়ে রুশ সরকার থেকে জানানো হয়েছে ইতিমধ্যে ইউক্রেনে প্রায় ৫০০ রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। ইউক্রেনীয়দের দাবি, সে সংখ্যা চার গুণ বেশি। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ যাতে সেনাবাহিনীতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য পুতিন নিজে জানিয়েছেন, প্রত্যেক নিহত সৈন্যকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে।
রাশিয়া বনাম অবশিষ্ট বিশ্ব
লক্ষণীয়, এই যুদ্ধ রাশিয়াকে একা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। চীন বা ভারত মুখে তাকে নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে ঠিক, কিন্তু রুশ আগ্রাসনকে সমর্থন জানিয়ে এখন পর্যন্ত কুটোটিও তারা এগিয়ে দেয়নি। অন্যদিকে ইউক্রেনের পাশে রয়েছে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপই নয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে রাশিয়াকে নিন্দা করে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাতে পৃথিবীর মাত্র চারটি দেশকে মস্কো পাশে পেয়েছে।
আর্থিক সামর্থ্য ও সামরিক ক্ষমতায় রাশিয়া ইউক্রেনের বহুগুণ বড় সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রতিপক্ষ যেখানে ন্যাটো, তখন তাদের ক্ষমতা ও সামর্থ্যের ফারাক বিপুল। ফলে নিজের সর্বনাশ না করে এই অসম যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া মস্কোর পক্ষে অসম্ভব।
গার্ডিয়ান পত্রিকার অর্থনৈতিক সম্পাদক ল্যারি এলিয়ট একজন ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সমর অভিযান যদি দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, তাহলে রাশিয়ার অর্থনীতি ১৪ শতাংশ হ্রাস পাবে। বেকারত্ব বাড়বে, সঞ্চয় মূল্যহীন হয়ে পড়বে, বিদেশি জিনিসপত্র বাজার থেকে উধাও হবে। রাশিয়া মূলত তেল-গ্যাস রপ্তানিনির্ভর একটি অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্র সেই তেল-গ্যাস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রাশিয়ার অর্থনীতি আরও দ্রুত চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে পড়বে।
অন্য কথায়, গত ২০ বছরে পুতিন রাশিয়াকে আর্থিক ও সামরিকভাবে যেখানে নিয়ে গেছেন, এই যুদ্ধ তাঁকে সেখান থেকে বহুদূরে ছুড়ে ফেলবে। তিনি আবার ১৯৯০ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের এক নতুন সংস্করণে পরিণত হবেন। তা সত্ত্বেও যুদ্ধের ময়দান থেকে প্রস্থান করা পুতিনের পক্ষে অসম্ভব। এটি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত ‘ইগো’ নয়, পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়ার মর্যাদার সঙ্গে জড়িত।
তাহলে সমাধান কী
মার্কিন নীতিনির্ধারক মহলে বলা শুরু হয়েছে, পুতিন ক্ষমতা থেকে সরে না গেলে সংকট মিটবে না। আকারে-ইঙ্গিতে কেউ কেউ ‘রিজিম চেঞ্জ’ বা ক্ষমতাবদলের কথা বলা শুরু করেছেন। রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক টাইমসের কলাম লেখক রস ডাউহাট লিখেছেন, পুতিন যতই কর্তৃত্ববাদী হোন না কেন, দেশের অর্থনীতি গাড্ডায় পড়ে গেলে তিনি রেহাই পাবেন না।
টিকে থাকার জন্য তাঁকে নির্ভর করতে হয় শুধু সেনা সমর্থনের ওপর নয়, অলিগার্ক নামে পরিচিত রাশিয়ার ধনকুবেরদের ওপর। রাশিয়া যদি একঘরে একটি ‘প্যারিয়া’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তা এদের কারও পছন্দ হবে না। বিস্মিত হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি এদের হাতেই পুতিনের শেষ ঘণ্টা বেজে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহলে এখন খোলামেলাভাবে তেমন সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে।
কিন্তু সমাধানের এর চেয়ে সহজ উপায় পশ্চিমের হাতে রয়েছে। রাশিয়ার চূড়ান্ত হেনস্তা যদি তাদের একমাত্র লক্ষ্য না হয় তাহলে কূটনৈতিক পথে সমাধান খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। তাদের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য রাশিয়া ও তার নাগরিকদের ‘শাস্তি’ দেওয়া। কিন্তু শাস্তি প্রদানের বদলে যদি আলাপ-আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করা হয়, তাহলে রাশিয়ার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছাড় আদায় সম্ভব।
ইউক্রেনীয় বিশেষজ্ঞ ইলিয়া কুসা প্রস্তাব করেছেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অনায়াসে ‘বারগেইনিং টুল’ বা দর–কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি যে কার্যকর, তা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে চলতি আলাপ-আলোচনা থেকেই প্রমাণ মেলে। তবে এ জন্য উদ্যোগটা পশ্চিমের কাছ থেকেই আসতে হবে, প্রয়োজনে ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ যুক্তি ব্যবহার করে পুতিনকে মুখরক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
তৃতীয় আরও একটি পথ রয়েছে। ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে রাশিয়ার দাবি যদি ইউক্রেন ও ন্যাটো মেনে নেয়, তাহলে সব পক্ষেরই মুখ রক্ষা হয়। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর হেনরি কিসিঞ্জার প্রস্তাব রেখেছিলেন, ইউক্রেনকে একই সঙ্গে রাশিয়া ও ন্যাটো উভয় পক্ষ থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
ঠিক যে নীতি অনুসরণ করে রাশিয়ার প্রতিবেশী ফিনল্যান্ড বিপদ এড়িয়ে চলেছে। এই প্রক্রিয়ার একটি নাম রয়েছে, তা হলো ‘ফিনল্যান্ডাইজেশন’। অন্য কথায়, সামরিকভাবে ইউক্রেনকে ‘নিরপেক্ষ’ রাষ্ট্রের ভূমিকা নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কিছুটা হতাশ হয়েই তেমন পথ অনুসরণে তাঁর সরকারের আগ্রহের কথা বলেছিলেন। রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসনের ফলে এখন অবশ্য এসবই ‘হারানো সম্ভাবনা’।
আরও দেখুনঃ
- নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন : ওবায়দুল কাদের
- অ্যাপ ভিত্তিক জেনারেটর সার্ভিস নিয়ে এলো এ সি আই মটরস্
- বিএনপি সহিংসতা আগুন সন্ত্রাস শুরু করলে রাজপথে মোকাবেলা করা হবে : ওবায়দুল কাদের
- রাজনীতি থেকে বিএনপির বিদায় নেওয়ার সময় এসেছে : ওবায়দুল কাদের
- গোপালগঞ্জে বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি নতুন প্রজন্মকে অজানা অধ্যয় জানাচ্ছে
- আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি জন দুর্ভোগ বাড়াবে এটা তাদের বোঝা উচিত : প্রধানমন্ত্রী