অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়ার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আলাভি নারী ও কিশোরীদের অপহরণ নিয়ে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে। সংগঠনটি জানায়, তাদের কাছে ৩৬ জন নারী ও কিশোরী অপহরণের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে, যাদের সবাই আলাভি সম্প্রদায়ের সদস্য।
সংখ্যালঘুদের আতঙ্কে ফেলে দিচ্ছে নতুন করে নিপীড়ন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নিজে আলাভি সম্প্রদায়ভুক্ত এবং দেশটিতে দীর্ঘকাল ধরে সংখ্যালঘুদের রক্ষক হিসেবে পরিচিত। তবে চলমান সংঘাত ও ইসলামপন্থীদের উত্থানের পর থেকে আলাভি জনগোষ্ঠী একের পর এক সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মার্চ ২০২৫-এ সিরিয়ার উপকূলবর্তী আলাভি অধ্যুষিত এলাকায় সংঘটিত গণহত্যায় প্রায় ১,৭০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যাদের অধিকাংশই আলাভি।
সরকারি প্রতিবেদন বনাম অ্যামনেস্টির পর্যবেক্ষণ
এ ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটি দাবি করেছে, তারা নারী ও কিশোরী অপহরণের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি। কিন্তু অ্যামনেস্টি জানায়, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে লাতাকিয়া, তারতুস, হোমস ও হামা প্রদেশে অন্তত ৩৬টি অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৮টি ঘটনা তারা বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করেছে।
সংগঠনটির দাবি অনুযায়ী:
- পরিবারগুলো এসব ঘটনা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে জানালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্তে চরম ব্যর্থতা দেখা গেছে।
- দুইটি ঘটনায় পরিবারগুলোকেই দোষারোপ করা হয়েছে।
- অপহৃতদের মধ্যে মাত্র দুজনকে ফিরে পাওয়া গেছে, বাকিরা এখনও নিখোঁজ।
ভীতির পরিবেশে বাস করছে আলাভি নারীরা
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন,
“মার্চ মাসের গণহত্যায় ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত আলাভি সম্প্রদায় এখন নতুন করে অপহরণের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। নারীরা বাড়ির বাইরে পা রাখতেও ভয় পাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন,
“সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং অপহরণ ও গুমের ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
জাতিসংঘও সতর্ক করেছে
জাতিসংঘের সিরিয়া তদন্ত কমিশন গত মাসে জানিয়েছে, তারা অন্তত ছয়জন আলাভি নারী অপহরণের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে এবং আরও কিছু অভিযোগ পেয়েছে, যেগুলোর বিশ্বস্ততা যাচাই করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো নতুন করে সিরিয়ায় সংখ্যালঘু অধিকার, নারী নিরাপত্তা এবং যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রশ্নে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।