বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ,  বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ সফর সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর ১৯ ঘন্টার সফরে বাংলাদেশে আগমন করেন এবং গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দুই ঘন্টাব্যাপী আলাপ-আলোচনা করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

হেনরী কিসিঞ্জারের এই সফর সম্পর্কে বিশিষ্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফস্যুলজ লেখেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রমতে কিসিঞ্জারের ঢাকা সফরের এক মাসের মধ্যে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসটি কুচক্রী মহলের যোগাযোগ ক্ষেত্রে পরিণত হয়।’ অধ্যাপক আবু সাইয়িদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস’ গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও লিফস্যুলজ তার ‘বাংলাদেশ-দ্য আনফিনিশ্ড রিভোলিউশিন’ গ্রন্থেও এই বিষয়ে লিখেছেন।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা শেষে কিসিঞ্জার অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেন, ‘একটি মানুষের অনুধাবন ক্ষমতা যে এতো ব্যাপক হতে পারে তা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ না হলে কখনো বুঝতে পারতেন না। জাতির পিতার কাছ থেকে এই অভিজ্ঞতা তার কাছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।’ এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ মুজিবের দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা যদি এমনই তাহলে আপনি ১৯৭১ সালে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন?Ñ কিসিঞ্জার এর উত্তর না দিয়ে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করলে তিন মিনিটের মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হয়ে যায়।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

লিফস্যুলজ আরো লেখেন, যারা তখন কিসিঞ্জারের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন তাদের কাছে তার এই বক্তব্য ছিল এক ধরনের ব্যাঙ্গোক্তি মাত্র। এ ছাড়াও, কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যখন প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যান, তখন প্রটোকল অনুযায়ী তাকে সৌজন্যমূলকভাবে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে বার বার অনুসন্ধান করা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের ওয়াশিংটন সফর সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ মুহূর্তে যখন পরিস্কার হয়ে গেলো, যাই হোক না কেনো, শেখ মুজিব ওয়াশিংটনে তাঁর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য যাবেনই তখন নিরুপায় হয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট হোয়াইট হাউসে মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

তবে, ব্যবস্থা ও অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত শীতল। কিসিঞ্জার ওয়াশিংটনেশেখ মুজিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ প্রদান করেননি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অবশ্য শেখ মুজিবের সঙ্গে তিনি দেখা করেন ও ছবি তোলেন। লিফস্যুলজ তাই বলেছেন, শেখ মুজিব সম্পর্কে কিসিঞ্জারের, বিশেষিত শব্দগুলোÑ ‘এ ম্যান অব ভাস্ট কনসেপশন’ ছিল এক ধরনের কথার কথা।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

এর আগে ১৯৭৪ সালের ২৪ জুন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে আসেন। তার সঙ্গে সফর সঙ্গী ছিলেন সর্বমোট ১০৭ জন। এদিকে একজন বিদেশী রাষ্ট্র নায়ককে যোগ্য সম্মান প্রদর্শনের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ভুট্টোর আগমনের দিন বাংলাদেশে পাকবাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরতার ভয়াল দিনসমূহের ছবি সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে কিসিঞ্জারের সফর ছিল নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ

 

হেনরী কিসিঞ্জারের ঢাকা আগমন ছাড়াও পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব পর্যন্ত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ ঘটনা ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্ল¬বী সরকারকে স্বীকৃতি দান ও তার রাষ্ট্রপ্রধানকে বাংলাদেশে লালগালিচা সংবর্ধনা, ১৯৭৪ সালের প্রচন্ড বন্যা ও বন্যা উদ্ভুত দুর্ভিক্ষ, খোন্দকার মোশতাকের ইরান সফর ইত্যাদি। এ সবকিছুই বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে সম্পর্কিত বলে অনেকে মনে করেন।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment