This post is also available in:
বাংলাদেশ
খুলনার কবিগান : কবিগান দুই বাংলা লোকসংগীতের একটি বিশিষ্ট ধারা। এই রীতিতে লোককবিরা প্রতিযোগিতামূলক গানের আসরে গান করে থাকেন। মূল গায়ককে কবি হতে হয়। কবিয়াল মুখে মুখে গান রচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সুরারোপ করে গেয়ে থাকেন। কবিগান পরিবেশনকারীদের বলা হয় কবিয়াল। খুলনার নিজস্ব কবিগান রয়েছে।

খুলনার কবিগান
ধরন শুনে সুশিক্ষিত পুত্রের বাক্য ডাক দিয়ে মূৰ্খ পিতায় কয়
পাড়ন: করলেম লালন পালন তোরে বাবা করে গায়ের রক্ত জল ও তার প্রতিফলন বেশ দিলি আমায়। ফুকুর : ও তুই পুত্র হয়ে মোর হৃদয়ে দিলি আজ যেটুকু বেদন খোকা তুই আমার কথা কোনো, হায় জ্ঞানীর হলে মূর্খ ব্যধি অনু পস্তার লাঠ্য ঔষধী। সমাজপতিরা তার দিলে বিধি তাতে হয় ব্যধি নিরসন। ফুকুর : বললি বাবা বললে মান থাকবে না এই কথা কেমনে বলিস। খোকা তুই আমার কথা নিস হায় বাংলাদেশের ধনী যারা আর যাদের সুন্দর চেহারা
তোর বজায় রাখতে শিক্ষার ধারা তাদেরকে তুই
বাপ বলে বলিস।
প্যাচ : খোকা তুই ভাল করে জেনে নেনা কেমনে বর্ণ সংস্কার হয়। যদি ছেলের বাবার চেয়ে মেয়ের বাবা হয় বেশি ধনী। আর পতির চেয়ে রমণী হয় যদি বেশি বিদুষী বা গুণী হয় না মধুর রসের আর আমদানি সেই গর্ভের সন্তানদের জারজ কহে। খোজ পরাশর সংহিতাতে সুস্পষ্ট লেখা তাতে দ্বিমত নয় তাহে।
ফুকুর : বললি আমি নাকি হুনুমানটি দ্বিমত নয় তাহে। বললি আমি নাকি হনুমান এই কথা কেমন করে বাও। তুমিতো সেই হনুমানের ছাও।
হায় হায় ছেলে হোক না পাশ বি,এ, এম,এ ধনীর মেয়ে করলে বিয়ে শেষে পশুর ন্যায় যায় বিক্রি হয়ে। হাঁটে হাটে ঢ্যাড়া দিয়ে দাও।
ফুকুর : ও তোর মায়ের মাথার উকুন দেখে তাই নিয়ে করিস উল্লাস। শ্বশুর বাড়ির অন্যেরই তো সাবাশ। হায় হায় জননী আর জন্ম ভূমিশ্চঃ যখনে চিনলে না তুমি। করলে আর একটা কাজ হবে দামী। আজ হতে তোর শাশুড়ির দুধ খাস।
ফুকুর : বললি গ্রাজুয়েটের মা লাউকে কয় নাউ বলিহারী উপহাস বটে জন্মেছিস কি তুই শাশুড়ির পেটে।
মা কত শীতের রাতে থেকে ভিজা বিছানাতে। মিল: ও তুই মূল না বুঝে অকারণে করিস গণ্ডগোল নিজের দিকে নিজে দেখ না
চায়না এই মাকে যে সম্মান দিতে। সে তো বউয়ের মালটানা মুটে।
তাকাইয়া।
হয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত
মা বাবা প্রায় উপেক্ষিত শিক্ষার আর মূল্য রইল কই ওকে ওর মূর্খ পিতার চায় না দিতে সত্য পরিচয়। দেখে মনে হয় বাবা ঠিক তালুই। ফুকুর : একজন গরীব লোকের দুটি ছেলে বড়টি বি,এ বিটি পাশ ও তার শ্বশুর মশাই ধানী জমি বিঘে পঞ্চাশ লাভ করিয়ে শ্বশুরের ভেট পেল
বিয়ের সার্টিফিকেট এখন শ্বশুর বাড়ি কেটে টিকেট
মা-বাবার আর নেয় না তলাশ। ডাক: বুড়ো পরের বাড়ি দিন মুজুরি খেটে দিনে দিনে আনে দিনে খায়
একদিন আষাঢ় মাসের ঘন বর্ষায় কাজ বেকারে উপবাসী দিবস ভর রজনীর অন্ধকারে বুড়ো উপনিত ছেলের ধারে, আঁখি ঝর ঝর।
পেচ: দেখে ছেলে সন্ধ্যা ভোজন অবসানে রয়েছে সে গিন্নির সনে সখাসনে হচ্ছে কত রসের কথা দেখে খোলা জালনার ফাঁকে তোমার এখানে পাঠালো কেটা যমকি তোমার পায় নাই
বুড়ো বাবার মাথা ছেলে কয় একি লেটা
বিরক্তিতে জলে গাটা
খোঁজ খবর।
রজনীর অন্ধকারে
১০২
বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা
আঁখি ঝর ঝর।
মুখ : একটা বুড়ির খবর যোগাতে এতই কি দুষ্কর।
ফুকর বাবা এখনো তো হয় নাই বুড়ো বয়স তোমার হয় নাই বেশি জড়ো তোমার চুল সাদা রোদের ফেরে নইলে তোমার হয় নাই বেশি জড়ো তোমার চুল সাদা রোদের ফেরে নইলে তোমার কে বুড়ো কতো তুমি মাঝে টাকা যে চাও বিচারে তুমি টাকা কি পাও পিতার ডিউটি ছাড়া করিনি ফাও বি,এ পাস তুমি করাও নিতো।
মিল: আমার শ্বশুর মশাই টাকা দিয়ে বি.এ পাস করালো আমায় এখন সাহায্যে করবো তোমায় সে বেটার না নিয়ে খোঁজ খবর একটা বুড়ির খাবার যোগাতে পার।
অন্তরা : বুড়ো তোমায় কবো কি তাই ভাবি তোমারে বাবা বলা যায় নাকি
কর অভদ্রের ন্যায় চলা ফেরা
নাই কাণ্ডজ্ঞান
আয়না ধরে দেখ তোমায়
দেখায় হনুমান। আমার শ্বশুর সোনার চাঁদ
আমি বাবুর জামাই আর বিদ্বান যে ও মূর্খকে বাবা বলা যায় নাকি?
আবার বুড়ির কথা বলব বা কি তার যা গুণ গ্রাজুয়েটের মা লাউকে কয় নাউ
লবণ কে কয় নুন
শুনে ইচ্ছে হয় হই খুন।
আবার বুড়ির মাথা ভরা যেমন উকুন গো তা আমার শিক্ষিতা বৌও সইতে পারে না কী
তোমারে বাবা বলা যায় নাকি আবার শ্বশুর বাড়ি আর এস না

আরও পড়ুন:
This post is also available in:
বাংলাদেশ