জব্বারের বলীখেলা মেলার শেষদিনে ক্রেতার ভিড়

ভোরের আলো ফুটতেই জব্বারের বলীখেলা বৈশাখী মেলায় ক্রেতার আগমন শুরু। ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী। তিনদিনের মেলার আজ শেষ দিন। ভিড় এড়াতে সকালে নারীরা এসেছেন পছন্দের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে।

জব্বারের বলীখেলা মেলার শেষদিনে ক্রেতার ভিড়

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে বহুকাল ধরে চলমান এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলায় আজ সকালের চিত্র ছিল এরকমই।লালদিঘি মাঠের সংস্কার কাজ চলমান অবস্থায় এটি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে সংশয় থাকায় আয়োজকরা আগে থেকে কোনো প্রস্তুতি নেননি। ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলীখেলা ও মেলা বাতিলই ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় মাত্র এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী লালদিঘি মাঠের বাইরে মে’লা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। অল্প সময়ের নোটিসে হওয়ায় সর্বশেষ আয়োজিত ২০১৯ সাল বা এর আগের সময়ের মতো এবার মেলার ব্যাপকতা ছিল না।

জব্বারের বলীখেলা মেলার শেষদিনে ক্রেতার ভিড়

করোনার কারণে গত দুই বছর মে’লা না হওয়ায় এবং এবারও আগ-ভাগে ঘোষণা না আসায় দেশের দূর-দূরান্তের বিক্রে’তারা তাদের পসরা নিয়ে মে’লায় আসতে পারেননি। চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকা থেকে মূলত দোকানিরা গৃহস্থালি ও লোকজ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছেন।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

মে’লার পরিধি ছোট হলেও অতীতের প্রথা মেনেই আইটেমভিত্তিক নির্দিষ্ট এলাকায় বসেছে অস্থায়ী দোকানগুলো। কেসিদে মোড় থেকে জেলা পরিষদ চত্বর পর্যন্ত সড়কের দোকানে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে মাটির তৈরি সরঞ্জাম। এরপরেই পর্যায়ক্রমে বসেছে মাটির তৈরি ঘর সাজানোর বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা, পুতুল, টাট্টু ঘোড়া, খেলনার গাড়ি টমটম, ঝাড়ু, হাতপাখা, কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ পুতুল, প্লাস্টিকের পণ্যের দোকান।

জব্বারের বলীখেলা মেলার শেষদিনে ক্রেতার ভিড়

লালদিঘির পূর্বপাড়ে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান বসানো হয়েছে। পাশেই বেতের তৈরি মোড়া, মাছ ধরার ছিপসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গ। মোয়া-মুড়ি, গজা, নারীদের ইমিটেশনের গহনা, শীতলপাটি, ফুল ও ফলের চারা, বাঁশের শলার তৈরি মাছ ধরার চাই (ফাঁদ), ডালা, কুলা, দা-বটিসহ মাছ ধরার অনুষঙ্গ বিক্রতাও দেখা গেছে। ঢাকার হাইকোর্ট এলাকার এক একতারা বিক্রে’তাকেও দেখা গেছে তার তৈরি একতারা বিক্রি করতে।

আজ সকালে এবং দুপুরে দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিন ২৪ এপ্রিল ক্রে’তা-বিক্রে’তা উভয়ই কম ছিল। দ্বিতীয় দিন বলীখেলার মূল দিন গতকাল বিপুল সংখ্যক ক্রে’তার সমাগম ঘটে। বেচাবিক্রিও ভালো হয়েছে। শেষদিন হওয়ায় আজ ভোর থেকেই ক্রে’তারা আসছেন। গতকালের চেয়ে আজ অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

জব্বারের বলীখেলা মেলার শেষদিনে ক্রেতার ভিড়

এ প্রসঙ্গে কাঠের তৈরি আসবাবপত্র বিক্রে’তা আসলাম হোসেন বাসসকে বলেন, ‘আয়োজকরা বলেছেন আজ রাতেই মে’লা শেষ। তাই মে’লায় গাড়ি ভাড়া করে আনা পণ্য ন্যায্য দামেই ছেড়ে দিচ্ছি। এগুলো আবার গাড়ি ভাড়া করে নিতে গেলে ক্ষতি বেশি হয়ে যাবে। তাই ক্রে’তা গা সওয়া দাম বললেই দিয়ে দিচ্ছি। অন্যবার পাঁচদিন বা আরো বেশি সময় দোকান রাখা যেতো। ক্রে’তার সাথে দর কষাকষিরও সুযোগ ছিল। এবার রমজান হওয়ায় আয়োজকরা মানুষের চলাচলের ভোগান্তির কথা ভেবে সময় আর বাড়াবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।’

মে’লা আয়োজক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন বাসসকে বলেন, ‘পবিত্র রমজান ও মানুষের চলাফেরার অসুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা মে’লা তিনদিনে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে হিসেবে আজ রাতে মে’লা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রশাসনও এ ব্যাপারে দোকানিদের বলেছেন। কিন্তু আয়োজক কমিটির সভাপতি, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী প্রশাসনকে কাল সকাল পর্যন্ত দোকানিদের থাকতে দেয়ার অনুরোধ করেছেন। সে হিসেবে কাল সকাল পর্যন্ত মে’লায় বিকিকিনি চলবে।’

আরও দেখুন 

Leave a Comment