শোক-দুর্দশা-জরা-রোগ আফগানিস্তানকে চেপে ধরেছে। আফগানিস্তান তালেবানদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে প্রায় এক বছর হলো । এই এক বছরের তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তান একটি বিপর্যয়কর মানবিক সংকটে পতিত হয়েছে। রোগ-শোক-দুর্দশা-জরা যেন আফগানি’স্তানকে চেপে রেখেছে । বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে এসব কথা বলা হয়। তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে এমন বিশাল মানবিক সংকট দেখা গিয়েছে যাকে জাতিসংঘ বলছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ।
শোক-দুর্দশা-জরা-রোগ আফগানিস্তানকে চেপে ধরেছে
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান দেশটির মানবিক সংকট যে কতটা ভয়াবহ, তার একটি উদাহরণ হতে পারে দক্ষিণ আফগানিস্তানের হাসপাতালের চিত্র। হাসপাতালটি দেশটির হেলমান্দ প্রদেশের মুসা কালা জেলায় অবস্থিত। হাসপাতালটিতে অনেক কলেরায় আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগী আসছিল। এ অবস্থায় গত মাসে সন্দেহভাজন কলেরা রোগী ছাড়া অন্য সবার জন্য হাসপাতালটির দরজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় বিরাট বিপদে পড়ে অন্য রোগীরা। হাসপাতালটিতে কলেরা পরীক্ষা-সুবিধার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও হাসপাতালে সন্দেহভাজন কলেরা রোগী আসছিল। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে হাসপাতালটিতে প্রায় সাড়ে ৫০০ সন্দেহভাজন কলেরা রোগী আসে। তাদের সবার মধ্যে কলেরার উপসর্গ ছিল।
সন্দেহভাজন কলেরা রোগীর ভিড় সামাল দিতে গিয়ে কী পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে, তার বিবরণ উঠে আসে হাসপাতালটির প্রধান এহসান উল্লাহ রডির বক্তব্যে। তিনি বলেন, কলেরার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত পান না। অবস্থা খুব জটিল। তাঁরা গত বছর, কিংবা তার আগে এমন পরিস্থিতি দেখেননি।
সহকারী নার্সিং সুপারভাইজার হোমিরা নওরোজির ভাষ্য, স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো বিশ্রাম নেই। অনেক রোগী গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আসে। কারণ, এই রোগীদের অভিভাবকদের শুরুতেই দ্রুত আসার মতো সামর্থ্য নেই। নওরোজি বলেন, তাঁরা ঠিক জানেন না যে রোগে কত মানুষ মারা গেছে। কারণ, অনেক রোগী হাসপাতালে আসেনি।
নৈতিক জটিলতা
গত বছরের ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটে। তার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যায়।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হলে দেশটিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়। তালেবানের ক্ষমতা দখল দেশটিকে খাদে ফেলে দেয়।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে গেলে দেশটির বিদেশি সাহায্য রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়। আফগানিস্তানের জিডিপির ৪৫ শতাংশ বিদেশি সাহায্যনির্ভর হওয়ায় দেশটি চরম সংকটে পড়ে।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৭ বিলিয়ন ডলার অর্থ আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে দেশটির ব্যাংকিং খাত ভেঙে পড়ে।
আফগানিস্তানকে সহায়তা করা নিয়ে দাতারা একধরনের নৈতিক জটিলতায় রয়েছে। কেননা, দেশটির বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।
আফগানিস্তানের সংকটটি সম্পর্কে অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান অ্যানালিস্ট নেটওয়ার্কের রোকসানা শাপুর বলেন, ‘আপনি যে দেশের সরকারকে স্বীকৃতি দেননি, তাকে কীভাবে সহায়তা করবেন?’
রোকসানা বলেন, গত জুনে দেশটিতে ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। হাজারো মানুষ গৃহহীন হন। এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় আফগানিস্তানের জন্য মানবিক সহায়তা জরুরি।
ক্ষুধা
আফগানিস্তান দারিদ্র্যে জর্জরিত একটি দেশ। এই দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট নতুন মাত্রায় মোড় নিয়েছে। তীব্র খরার সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি।
শিশুসহ আফগানিস্তানের বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষুধায় ভুগছে।
হেলমান্দ প্রদেশের এক নারী বলেন, ‘তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা রান্নার তেলও খুঁজে পাচ্ছি না।’ ব্রেশনা নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমরা শুকনা রুটিও খুঁজে পাচ্ছি না।’
আরও দেখুনঃ
- কাতারকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি দেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
- ৭৫-এর পর সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
- বিএনপির অনেক নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে আসেন : কাদের
- খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য মার্কিন সরকারের সহযোগিতা কামনা
- কাল জাতীয় শোক দিবস : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদত বার্ষিকী
- এদেশে হত্যা-ক্যু, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি : ওবায়দুল কাদের