সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবি ও বিএসএফ ঐক্যমত

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবি ও বিএসএফ ঐক্যমত, সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে বিজিবি ও বিএসএফ ডিজি একমত পোষণ করেছে। এ লক্ষ্যে অধিক সতর্কতামূলক ও কার্যকরী উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তে যৌথটহল জোরদার, বিশেষ করে রাত্রিকালীন টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। আজ দুপুরে পিলখানায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদর দপ্তরে আয়োজিত ৫ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক এসব কথা জানান।

 

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবি ও বিএসএফ ঐক্যমত

যৌথ আলোচনার দলিল (জেআরডি) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫ দিনব্যাপী (১৭-২১ জুলাই-২০২২) ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন আজ শেষ হয়েছে। সীমান্তে আক্রমন ও হামলার ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে সমন্বিত যৌথটহল পরিচালনাসহ অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করা, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ব্যাপারে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তবর্তী দুই এলাকাতেই ভালোমন্দ মানুষ রয়েছে উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, তাদের কারণেই সীমান্তে অপরাধ সংঘঠিত হয়। তাদের কারণেই চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, গরু পাচার, শিশু ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে। বিএসএফ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা নন লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করি। যাতে প্রতিরোধ প্রাণঘাতী না হয়। ৮৯ জন বিএসএফ সদস্য সীমান্তে অপরাধীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন।’

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

বিজিবি’র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যৌথভাবে সীমান্ত কেন্দ্রিক অপরাধ দমন, সীমান্ত হত্যা শূণ্যের কোঠায় আনতে কাজ করছি।’ গত জুন মাসে সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন পাঁচজন। প্রতিবার সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আলোচনা হয়। কিন্তু সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘এ প্রশ্ন প্রতিবছরই শুনতে হয়। বিজিবি ও বিএসএফ খুবই পেশাদার বাহিনী। তবে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়েও আলাদা। আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে থাকি, কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায়।’

বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে বিভিন্ন অপরাধ, মাদক চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি কাটাতারের বেড়া নির্মাণসহ ভারতীয় পার্শ্বে অনিষ্পন্ন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

 

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবি ও বিএসএফ ঐক্যমত

 

সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)-এর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্যসামগ্রী পাচার যেমন- মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য (বিশেষ করে ইয়াবা) পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র, জাল মূদ্রা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ  বিভিন্ন ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে সিবিএমপি বাস্তবায়ন এবং উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তথ্য আদান-প্রদানে দু’পক্ষ সম্মত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানব পাচার, সীমান্ত পিলার উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন।

উভয় পক্ষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হন। সর্বোপরি উভয় পক্ষ সীমান্তের শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেন।
সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী  গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে  নিজ নিজ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়টি তুলে ধরে উভয়পক্ষই এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সুনির্দিষ্ট তথ্য আদান-প্রদান ও নিজ নিজ সীমান্তে প্রয়োজনীয় আভিযানিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছান।

সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিবর্গসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।

 

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবি ও বিএসএফ ঐক্যমত

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment