হাসির কৌতুক, জোকস, কৌতুকী [ Bangla Jokes ] আমাদের সংস্কৃতির এক সময় বড় একটি অংশ ছিল। আজও আমরা যখন বন্ধুবান্ধব একত্রিত হই, স্মার্ট ফোনের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেই জমে ওঠে আড্ডা। আর সেই আড্ডার একান্ত অনুষঙ্গ কৌতুক। আজ তেমন কিছু হাসির কৌতুক, জোকস, কৌতুকী নিয়েই আমাদের আয়োজন।
Table of Contents
হাসির কৌতুক, জোকস, কৌতুকী
বাঁচার সম্ভাবনা শতভাগ
রোগী: ডাক্তার, এই রোগে আমার বাঁচার সম্ভাবনা কত পার্সেন্ট?
চিকিৎসক: শতভাগ।
রোগী: কীভাবে?
চিকিৎসক: সাধারণত এ রোগে প্রতি দশজনে একজন বাঁচে।
রোগী: তাহলে আমার বাঁচার ভরসা কোথায়?
চিকিৎসক: আপনি আমার দশম রোগী। এর আগের নয়জনই মারা গেছেন।
সত্যিকারের ভালোবাসা বোঝার উপায়
প্রেমিকা একদিন খুব অভিমান করে প্রেমিককে বলছে—
প্রেমিকা: তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাস?
প্রেমিক: একশ বার!
প্রেমিকা: কিন্তু আমাকে তো তুমি পরোয়াই কর না!
প্রেমিক: যে সত্যিকারের প্রেমে পরে সে কারও পরোয়া করে না।
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এমনিতেই থেমে যায়
শিক্ষক: মজনু, ক্লাসে এত দেরিতে এসেছ কেন?
মজনু: আমার কী দোষ, স্যার! বাবা-মা ঝগড়া করছিল।
শিক্ষক: তারা ঝগড়া করছিল করতে দিতে, তুমি থামাতে গেলে কেন? স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এমনিতেই থেমে যায়।
মজনু: সেইটা আমিও জানি স্যার!
শিক্ষক: তাহলে?
মজনু: আমার এক পাটি জুতা বাবার হাতে, আরেকটা মার হাতে ছিল, স্যার।
মা-মেয়ের দুঃখ যখন একই
মা-মেয়ে গল্প করছেন। মেয়ের বয়স ৪৫ আর মায়ের বয়স ৬৫ বছর। মেয়ে মাকে বলছেন—
মেয়ে: মা, জীবনে একটা দুঃখ থাইকা গেল। ভালো শাশুড়ি পেলাম না যখন বউ ছিলাম। আর যখন শাশুড়ি হলাম তখন ভালো বউ পেলাম না।
একথা বলে মেয়ে কাঁদতে শুরু করলো। মা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে হঠাৎ তিনিও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন।
দাঁতের পোকা দূর করার উপায়
এক লোকের দাঁত পোকায় খেয়ে ফেলছে! সে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার বলল—
ডাক্তার: আজ থেকে চার দিন সকাল-সন্ধ্যা দুধ ও বিস্কুট খাবেন। ৫ম দিন শুধু দুধ খাবেন।
রোগী: তাইলে আমার দাঁতের পোকা দূর হবে তো?
ডাক্তার: পোকা অবশ্যই বের হয়ে যাবে শতভাগ গ্যারান্টি!
তারপর লোকটি চার দিন সকাল-সন্ধ্যা দুধ ও বিস্কুট খেল। ৫ম দিন শুধু দুধ খেল। এরপরই দাঁত থেকে পোকা বের হয়ে বলল— পোকা: আজকে কি বিস্কুট নাই?
গোপালের বুদ্ধিতে জব্দ নবাব
নবাবের খেয়ালের অন্ত নেই। একবার নবাবের খেয়াল হলো মাটির নীচে কী আছে তা জ্যোতিষী পণ্ডিত দ্বারা গণনা করিয়ে নিতে হবে। আর গণনা সত্য কি মিথ্যা তা তো সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাটি খুঁড়লেই বোঝা যাবে। আর সঠিকভাবে বলে দিতে পারলে নবাব প্রত্যেক পণ্ডিতকে এক হাজার আশরফি করে পুরস্কার দেবেন। না বলতে পারলে আজীবন কারাবাস।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কিছু দরিদ্র জ্যোতিষী পণ্ডিতকে নবাব দরবারে পাঠিয়েছিলেন তারা কেউ মাটির নীচে কী আছে বলতে না পারায় কারাগারে রয়েছে। এমন খবর পেয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বিষণ্ণ মুখে বসেছিলেন। তিনি ভাবছিলেন একমাত্র তারই দোষে এতগুলো ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে নবাবের কারাগারে পচে মরতে হবে।
সদাহাস্যময় গোপাল মহারাজের ঐ ভাব দেখে বলল, মহারাজ, অমন গোমরামুখ করে বসে আছেন কেন? মহারাজ গোপালের কাছে সব ঘটনা বলেলেন। গোপাল শুনে বলল, এর জন্য ভাবনা কি? আপনি নবাবের কাছে একটি চিঠি দিন যে, একজন বড় জ্যোতিষী পাঠালাম, যিনি অনায়াসে মাটির নীচে কি আছে গণনা করে বলে দিতে পারেন।
মহারাজ অবাক হয়ে বললেন, গোপাল, তুমি গণনা করবে? কী করব জানি না। তবে নিজেও বেঁচে আসব, আর দরিদ্র ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণকে নবাবের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবো, তাছাড়া আপনার সম্মানও অক্ষুণ্ণ রাখব। এদিকে মন্ত্রী স্বভাবতই বললেন, এ অসম্ভব।
গোপাল মন্ত্রীকে একটু খোঁজা দিয়েই বলল, আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমি সহজেই কার্যসিদ্ধ হয়ে ফিরে আসব। মহারাজ বললেন, তুমি যদি দরিদ্র জ্যোতিষী পণ্ডিতদের নবাবের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে পার আমি তোমাকে হাজার টাকা পুরস্কার দেব।
গোপাল বাড়ি ফিরে গিয়ে খাটের একটা ভাঙা পায়াকে চৌদ্দ পর্দা শালুর কাপড় দিয়ে বেশ ভালোভাবে জড়িয়ে নিল। গরদের কাপড়, গরদের চাদর, কাঁধে নামাবলী, মাথায় লম্বা টিকি ঝুলিয়ে এবং চৌদ্দ পর্দা কাপড়ে জড়ানো খাটের পায়াখানা হাতে নিয়ে নবাব দরবারে গিয়ে উপস্থিত হলো।
নবাবকে যথোচিত সেলাম জানিয়ে বলল, খোদাবন্দ, আমাকে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার দরবারে পাঠিয়েছেন। মাটির নীচে কী আছে আমি তা অনায়াসেই গণনা করে বলে দিতে পারি। গোপালের কথা শুনে নবাব খুব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, আপনার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছি আপনি একজন মহান পণ্ডিত। আপনি আসন গ্রহন করুন এবং একটু বিশ্রাম করে বলুন- মাটির নীচে কী আছে।
গোপাল নির্দিষ্ট আসনে বসে চৌদ্দ পর্দা জড়ানো খাটের পায়ার তিন পর্দা সরিয়ে মন্ত্র পড়বার ভান করে নবাবকে বলল, হুজুরালি সর্বং সারং খট্টাঙ্গ পুরাণম্। হিন্দু পণ্ডিতং ন শক্যং ভূতলগণনম্।
নবাব গোপালকে বলল পণ্ডিতমশাই, আপনার এ শ্লোকের অর্থ কি? গোপাল মুচকি হেসে বলল, হুজুরালি, অষ্টাদশ পুরাণের সার এই খট্টাঙ্গ পুরাণ। এতে বলছে মাটির নীচে কি আছে- তা কোন হিন্দু পণ্ডিতই গণনা করে বলতে পারবে না।
গোপালের কথা শুনে নবাব বললেন, তবে কারা এরূপ গণনা করতে পারবে মহাশয়? গোপাল বলল, সেকথাও উল্লেখ আছে নবাব সাহেব। যবন বা ম্লেচ্ছং ভূতলগনং শক্যং। হিন্দু পণ্ডিতা পৃথিবী বা তদূর্ধ্বং। অর্থাৎ যবন বা ম্লেচ্ছগণকে মরবার পরে মাটির নীচে কবর দেওয়া হয়। অতএব যবন বা ম্লেচ্ছ পণ্ডিতগণ ভূতলের নীচে কী আছে অনায়াসে গণনা করে বলে দিতে পারবে।
আর যেহেতু হিন্দু পণ্ডিতগণ মরবার পর তাদের দাহ করা হয় অতএব হিন্দু পণ্ডিতগণ অনায়াসে মাটি ও উপরের আকাশে কি আছে সহজেই গণনা করে বলে দিতে পারবে। আপনি অনর্থক কতগুলো হিন্দু পণ্ডিতকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দিচ্ছেন।
গোপালের যুক্তিপূর্ণ কথা ও শাস্ত্রবচন নবাবের খুব মনঃপূত হলো, তিনি সমস্ত হিন্দু পণ্ডিতকে মুক্ত করে দিলেন এবং প্রত্যেককে একশো টাকা পুরস্কার দিয়ে বদায় দিলেন।
তারপর গোপালের হাতে পাঁচশো টাকা দিয়ে বললেন, আপনি যথার্থ কথা বলেছেন পণ্ডিতমশাই। আপনি না বললে আমি অনেক হিন্দু পণ্ডিতকে অনর্থক কষ্ট দিতুম। এই সামান্য কিছু নিন। আমি এক্ষুণি কাঠমোল্লা পণ্ডিতদের ডেকে এনে মাটির নীচে কী আছে তা গণনা করাচ্ছি।
নবাবের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা পুরস্কার পেয়ে, খট্টাঙ্গ পুরাণখানা হাতে নিয়ে গোপাল একরকম নাচতে-নাচতে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় এসে উপস্থিত হলো। নবাবের কারাগার থেকে যেসব জ্যোতিষী পণ্ডিত মুক্ত হয়েছিল, তারাও এসে সকলেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় উপস্থিত হলো।
গোপালের মুখে সব ঘটনা শুনে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও সভার সকলেই জয়ধ্বনি করে উঠলো জয় গোপালের জয়। জয় খট্টাঙ্গ পুরাণের জয়। মহারাজ গোপালকে প্রতিশ্রুতিমত এক হাজার টাকা পুরস্কার দিয়ে বললেন, তোমার খট্টাঙ্গ পুরাণখানা একবার দেখাও তো।
গোপাল পুরস্কারের টাকা ট্যাঁকে গুঁজে খট্টাঙ্গ পুরাণের ওপরে জরানো চৌদ্দ পর্দা কাপড় সরিয়ে ফেলতেই খাটের একটি ভাঙা পায়া বেরিয়ে পড়ল। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় তুমুল হাসির রোল উঠলো। এদিকে মন্ত্রী তো গোপালকে জব্দ করার মতলব কোষতে লাগলো।
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার সমাধান
এক মনোবিজ্ঞানীর চেম্বারে একজন লোক এসেছেন। তিনি তার সমস্যার কথা বলছেন—
ভুক্তভোগী লোক: আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে সারাক্ষণ ঝগড়া করে। আমি দিন দিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমাকে এর সমাধান দিন।
মনোবিদ: আপনার স্ত্রী কি সারাক্ষণই ঝগড়া করে আপনার সঙ্গে?
ভুক্তভোগী লোক: যেকোনো বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা শেষ পর্যন্ত ঝগড়ায় গড়ায়। এর থেকে বাঁচার কোনো কায়দাই কি নেই, স্যার!
মনোবিদ: আছে। যখন বুঝবেন আপনি ভুল করছেন তখন সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিন।
ভুক্তভোগী: আর যদি আমি ঠিক হই?
মনোবিদ: সে ক্ষেত্রে নিজের মুখ বন্ধ করে রাখবেন।
সব সুন্দর নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর
ফরিদ সাহেব তার ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছেন—
ফরিদ সাহেব: পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সবকিছুই সুন্দর হতে পারে। যেমন সকাল ৯টায় স্কুলের ঘণ্টা চরম বিরক্তিকর লাগে ছাত্রদের।
ছেলে: হ্যাঁ বাবা ঠিকই বলেছো।
ফরিদ সাহেব: আর সেই ঘণ্টার শব্দই বিকাল ৪টায় কানে মধুবর্ষণ করে তাদের।
ছেলে: হ্যাঁ, বাবা। কিন্তু তোমার এমন লাগতো বলেই আমি ভালো ছাত্র হতে পারিনি।
স্বামী যখন অতিরিক্ত খুঁতখুঁত হয়
স্বামী: কীভাবে রান্না কর! মুড়িঘণ্ট তো মনে হচ্ছে গোবর!
স্ত্রী: হায় খোদা! তুমি তো দেখছি দুনিয়ার সব খারাপ জিনিসই চেখে রেখেছ!
স্বামী: কি কথার কী জবাব দিচ্ছ?
স্ত্রী: তুমি গোবর খেয়ে দেখেছ, উটের চামড়া খেয়েছ, বুড়িগঙ্গার পানিও খেয়েছ…
স্বামী: হায় আল্লাহ! এর কি মাথা খারাপ হয়া গেল নাকি?
স্ত্রী: তোমার লগে সংসার কইরা মাথা খারাপ না হইয়া উপায় আছে? সে দিন আমার এত যত্নে পাকানো স্যুপ খেয়ে বললে- বুড়িগঙ্গার পচা পানির মতো হয়েছে। তার আগের দিন আমার তৈরি রুটি খেয়ে বললে- উটের চামড়ার মতো লাগছে।
আরও পড়ুন:
বাংলা কৌতুকী সংগ্রহ [ কৌতুক ]- শচীন ভৌমিক [ Bangla Jokes Collection – Sachin Bhowmick]