আংশিক যুদ্ধবিরতির পর গাজায় পৌঁছেছে খাদ্য সহায়তা, পরিস্থিতি এখনো জটিল

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় প্রতিদিনের জন্য একটি “কৌশলগত বিরতি” ঘোষণা করায় সোমবার কিছু খাদ্যবাহী ট্রাক এলাকাটিতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, এই সহায়তা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য এবং ভয়াবহ ক্ষুধা ও অপুষ্টির সংকট রোধে বহুগুণ বেশি সাহায্য প্রয়োজন।

চরম খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছে গাজার জনগণ
এএফপি-র তথ্য অনুযায়ী, গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারাত্মক খাদ্য ঘাটতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গাজা সিটি থেকে প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ সময় পর সোমবার প্রথমবারের মতো প্রায় পাঁচ কেজি ময়দা পেয়েছেন জামিল সাফাদি নামে এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর স্ত্রী, ছয় সন্তান এবং অসুস্থ পিতাকে নিয়ে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন,

“গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ভোরে উঠে খাবারের খোঁজে বেরিয়েছি। আজই প্রথমবার কিছু ময়দা পেলাম—সেটাও প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়েছে।”

তবে অনেকেই এখনো কোনো খাদ্য পাননি। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ত্রাণ বিতরণের সময় ট্রাক লুটের ঘটনা ঘটেছে এবং কিছু জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

এক বাসিন্দা আমির আল-রাশ বলেন,

“আমি নিজ চোখে মৃতদেহ ও আহত মানুষ দেখেছি। মানুষ প্রতিদিন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে ময়দা পাওয়ার, কিন্তু মিশর থেকে যেটুকু আসছে, তা একেবারেই অপ্রতুল।”

ত্রাণ সরবরাহের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা
ইসরায়েল ২ মার্চ ২০২৫ থেকে গাজা পুরোপুরি অবরোধ করে রাখে। তবে মে মাসের শেষ দিকে সামান্য কিছু সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সিভিল অ্যাফেয়ার্স সংস্থা জানিয়েছে, রোববার ১২০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, এবং সোমবার আরও কিছু ট্রাক প্রবেশ করেছে।

ত্রাণ সরবরাহে সাহায্য করছে বিভিন্ন দেশ:

  • জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত: প্যারাশুটের মাধ্যমে গাজায় খাদ্য ফেলে দিচ্ছে।

  • মিশর: রাফা সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ ট্রাক পাঠাচ্ছে।

জাতিসংঘের আশঙ্কা ও পরামর্শ
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, গাজার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৫০০-৬০০টি ট্রাক প্রয়োজন, যাতে খাদ্য, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসামগ্রী থাকে।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়:

“হাজার হাজার ট্রাক বর্তমানে জর্ডান ও মিশরে আটকে আছে। অবিলম্বে সব সীমান্ত খুলে দিয়ে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

তারা আরও জানিয়েছে,

  • গাজা সিটিতে প্রতি পাঁচজন শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে

  • ইতোমধ্যে ১০০-এর বেশি মানুষ অনাহারে মারা গেছেন

হামলা ও প্রাণহানির অব্যাহত ধারা
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে রাতের হামলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ওই হামলায় নিহত হলেও তাঁর গর্ভস্থ শিশুকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং বর্তমানে শিশুটি ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থবির, কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত
যদিও যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে, তা বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে।

তবে কূটনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে জাতিসংঘে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের উদ্যোগে গতি আনার চেষ্টা চলছে।