আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে কাতার, ইরান ও সৌদি আরবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপাতত সংযম বজায় রেখেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। তবে সীমান্তে সংঘর্ষ ও পাল্টা হামলার খবর এখনও পাওয়া যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
রোববার আফগান তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, তিনটি আঞ্চলিক দেশ—কাতার, ইরান ও সৌদি আরব—কাবুল ও ইসলামাবাদ উভয়কেই উত্তেজনা না বাড়িয়ে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। খবরটি প্রকাশ করেছে আফগান গণমাধ্যম টোলো নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দেশগুলো পৃথক বিবৃতিতে দুই পক্ষকে সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে তারা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।
সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “কাতার ও সৌদি আরব যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, এবং আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত তা গ্রহণ করেছে। কিন্তু আজ সকালে আমরা খবর পেয়েছি যে পাকিস্তান আক্রমণ চালিয়েছে। যদি এই আক্রমণ অব্যাহত থাকে, আফগানিস্তান তার ভূখণ্ড রক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করবে।”
তিনি আরও দাবি করেন, ডুরান্ড লাইনের কাছে বেহরামপুর জেলায় পাল্টা হামলায় অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) দাবি করেছে, তারা সাম্প্রতিক অভিযানে ২০০-র বেশি আফগান সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।
জবিউল্লাহ মুজাহিদ পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, “প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে আইএস (আইএসআইএস)-এর সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, যা সীমান্ত অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।
এর আগে বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে— দুটি কাবুলে, এবং একটি দক্ষিণ-পূর্ব পাক্তিকা প্রদেশে। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়।
পাকিস্তান অবশ্য তাদের দায় অস্বীকার করে বলেছে, আফগান ভূখণ্ডে হামলার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। বরং ইসলামাবাদ দাবি করেছে, কাবুলকে উচিত পাকিস্তানি তালেবানদের (টিটিপি) আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা।
আঞ্চলিক শান্তির প্রচেষ্টা
দেশ | অবস্থান/প্রতিক্রিয়া | মূল বার্তা |
কাতার | শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংযমের আহ্বান | সংঘর্ষ এড়িয়ে আলোচনায় সমাধান |
ইরান | আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান | দুই দেশের সংলাপের পক্ষে |
সৌদি আরব | যুদ্ধবিরতি ও সমঝোতার আহ্বান | মুসলিম বিশ্বের ঐক্য রক্ষায় আহ্বান |
আফগানিস্তান (তালেবান সরকার) | সংযমের প্রতিশ্রুতি, তবে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি | “আক্রমণ চললে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করব” |
পাকিস্তান | সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত | “আফগানিস্তান টিটিপিকে আশ্রয় দিচ্ছে” |
যদিও কাতার, ইরান ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমিয়েছে, সীমান্তে sporadic সংঘর্ষ ও হামলার খবর এখনো পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি উভয় দেশ সংলাপের টেবিলে না আসে, তবে এই সংঘাত দ্রুতই আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকটে রূপ নিতে পারে।
বর্তমানে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ রয়ে গেছে যে দুই দেশের সীমান্তে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করবে।