চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার রিয়াদের পুরনো নৈতিক বার্তা ভাইরাল

রাজনৈতিক আদর্শ ও নৈতিকতা নিয়ে সোচ্চার ফেসবুক পোস্টের জন্য পরিচিত আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ এবার নিজেই চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে। গুলশানের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা দাবির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার পুরনো কিছু সামাজিকমাধ্যম পোস্ট এ ঘটনার পর ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

রিয়াদের নৈতিকতা ও রাজনীতিবোধ নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল
গ্রেপ্তারের পর সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে রিয়াদের একটি স্ট্যাটাস, যেখানে তিনি লেখেন:
“রাজনীতি তারাই করুন, যারা মানুষের সেবা করতে চান। নিজের জন্য কিছু করতে চাইলে ব্যবসা করুন, রাজনীতি নয়।”

আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি উর্দু সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক সাদাত হাসান মান্টোর একটি কথোপকথন তুলে ধরেন—
“আজান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনি, আর নামাজ পড়ে সব চোর।”
এই পোস্টগুলো এখন সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে যখন রিয়াদ নিজেই এমন একটি গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।

চাঁদাবাজির অভিযোগ ও মামলার বিবরণ
সিদ্দিক আবু জাফর নামের এক ব্যক্তি গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় রিয়াদসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করেন। তারা হলেন—আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, কাজী গৌরব অপু, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং একজন শিশু মো. আমিনুল ইসলাম। শিশুর বিচার হবে শিশু আদালতে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শাম্মী আহমেদকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে হুমকি দেন এবং পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন। বাদী পরবর্তীতে আরও পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দেন।

এরপর ১৯ জুলাই ও ২৬ জুলাই আসামিরা পুনরায় বাদীর বাসায় গিয়ে হুমকি দেন। শেষবার ২৬ জুলাই বিকেলে পুলিশে খবর দিলে পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে এজাহারভুক্ত আসামি কাজী গৌরব অপু পালিয়ে যান।

রিমান্ডের আদেশ
২৭ জুলাই (রোববার) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান রিয়াদসহ চারজনের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন: সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং মো. ইব্রাহিম হোসেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান অভিযুক্তদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন। বিএনপিপন্থী একাধিক আইনজীবীও রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ রিমান্ড চেয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। অপরদিকে আসামিপক্ষ জামিন আবেদন করেন, যা আদালত নামঞ্জুর করে।

সমালোচনার কেন্দ্রে রিয়াদ
গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। রাজনীতি ও নৈতিকতার বিষয়ে যিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন, তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ সামাজিকভাবে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এখন জনমনে প্রশ্ন—নৈতিকতার বুলি আর বাস্তব রাজনীতির ব্যবধান কতটা?