অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্যমতে, ২০২২ সালে বাড়ছে অ্যাসিড সহিংসতার ১৭টি ঘটনায় ২৭ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে ১৬ নারী, ৯ পুরুষ এবং দুই শিশু রয়েছে। এই হিসাব বলছে, অ্যাসিড সহিংসতা বাড়তির দিকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাসিড সহিংসতা কমেছে—নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন ‘আত্মতুষ্টি’র কারণে আইনের প্রয়োগ ও নজরদারি দুর্বল হয়ে পড়েছে। অ্যাসিড দমন আইনের মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে কীভাবে অ্যাসিড যাচ্ছে, সেটা অনুসন্ধানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগও কমে গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, ‘অ্যাসিড সহিংসতার নতুন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।’ গত বছর ২৭ জন দগ্ধের তথ্য জানালে তিনি বলেন, ‘আগে দিনে ৩–৪টি ঘটত, এখন বছরে ২৭টিতে নেমে এসেছে।’ অ্যাসিড–সংক্রান্ত মামলার তদন্তে পুলিশের গাফিলতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো আমাকে দেখে বলতে হবে।’
এ পর্যন্ত ৪৫৭ অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ভূমিহীনদের বাড়ি, শিক্ষা, আইনি, চিকিৎসা ও মাসিক ভাতা দেওয়া হয়।
নজরদারির দুর্বলতায় আবারো বাড়ছে অ্যাসিড সহিংসতা
কয়েক বছরের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২০০৬ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে (২০১২ সাল বাদে) অ্যাসিড সহিংসতার অর্ধেক ঘটনাই ঘটেছে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে। ২০১৫ সাল থেকে এ ঘটনা এক–চর্তুথাংশে নেমে আসে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তা ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
২০২২ সালে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও প্রতিবেশীর অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সর্বোচ্চ পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। যৌতুক নিয়ে স্বামীর মাধ্যমে চারটি, সাবেক স্বামীর মাধ্যমে একটি, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মাধ্যমে একটি, সাবেক প্রেমিকের মাধ্যমে একটি এবং স্বজন, পারিবারিক বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে বাকি পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। দগ্ধ ব্যক্তিদের ৫৯ শতাংশই নারী।
এএসএফের নির্বাহী পরিচালক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, অ্যাসিড সহিংসতা কমেছে ভেবে নীতিনির্ধারক থেকে গণমাধ্যম—সব পর্যায়ে একধরনের ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। অ্যাসিড বিক্রি এবং সহিংসতা কমাতে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর নজরদারির দুর্বলতায় সহিংসতা আবার বাড়তে পারে।

এএসএফ ১৯৯৯ সাল থেকে অ্যাসিড সহিংসতার পরিসংখ্যান রাখছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, ১৯৯৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে ৩ হাজার ৮৭০ জন অ্যাসিডদগ্ধ হন। ১৯৯৯ সালে ১৬৮ জন অ্যাসিডের শিকার হন। ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৪৯৬ জন দগ্ধ হন। ২০০৩ সাল থেকে অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০১৮ সালে ২২, ২০১৯ সালে ২১, ২০২০ সালে ২২, ২০২১ সালে ১৯ এবং ২০২২ সালে বেড়ে ২৭ জন হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ জানান, আগুন বা গরম পানিতে পোড়া রোগীদের ক্ষত ধীরে ধীরে সেরে ওঠে। কিন্তু অ্যাসিডে পোড়ার ক্ষত অনেক গভীর হয়। নিচের চামড়া এমনভাবে পোড়ে যে ঠিক করা যায় না। পাঁচ–ছয় বছর চিকিৎসা চালাতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান জানান, অ্যাসিড সহিংসতা কমে গেছে বলে এটাকে গুরুত্বের বাইরে রাখা যাবে না। বরং এ অপরাধ এখনো কেন ঘটছে, সেটার গুরুত্ব বুঝে তা পুরোপুরি বন্ধে গবেষণা করা দরকার। এ অপরাধ প্রতিরোধে সমাজে সমন্বিত ব্যবস্থা গড়তে হবে।
আরও দেখুনঃ