জিলাইভ ডেস্ক রিপোর্ট : ইয়ুথ গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. সীমা হামিদ বলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় পর এখন শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এই পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে শিল্প ও সংস্কৃতির সব শাখায় উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশেও ভারতের মতো বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দেশে শিল্প- সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের অনুকূল সময় বিরাজ করছে; দরকার পৃষ্ঠপোষকতা
তিনি বলেন ভারত উপমহাদেশের সংস্কৃতি চর্চা একই উৎসে শুরু হলেও দেশ বিভক্তির পর নানা কারনে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। প্রথমত, পাকিস্তান আমলে নীপিড়ক সরকারের বাধা বিপত্তির কারনে অনুকূল পরিবেশ না থাকা।
দ্বীতিয়ত, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অব্যাহত পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ও সামরিক শাসকদের কবলে দেশের জনগন অব্যাহত নীপিড়নের শিকার হওয়া এবং অব্যবহিত সময়ে জঙ্গীবাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারনে শিল্প ও সংস্কৃতির নির্ভয় চর্চা ও বিকাশ বাধাগ্রস্হ হয়েছে।
দীর্ঘ সময় পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর এদেশে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার মুক্ত পরিবেশ ফিরে আসে।
ড. সীমা হামিদ বলেন এ সুযোগকে এখন কাজে লাগাতে হবে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাতে এই শহর থেকে একটু দূরে মাদানী এভিনিউ’র নিরিবিলি পরিবেশে অবস্হিত ‘ইচ্ছেবাড়ি’ তে শিল্পী-সংগীতপ্রেমী-কলাকুশলী ও পৃষ্ঠপোষকদের মনের রঙ প্রকাশের এক অনুষ্ঠানে ড. সীমা হামিদ বক্তৃতা করছিলেন।
অনুষ্ঠান যখন শুরু হয় তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে তখন রাত আট টা ছুই ছুই। উম্মুক্ত আকাশের নীচে তাবুহীন নিয়ন আলো চারদিক থেকে ঝরছে। ফোকাস – শুভ্র রঙে সাজানো স্টেজ। সদ্য শুরু ফাগুনে শীতের প্রভাব পুরো কাটেনি তখনো। হালকা কনকনে ঠান্ডা। ওয়ান টাইম মাটির কাপে অসাধারণ গরম দুধ চা সরবরাহ করে আয়োজকরা অতিথিদের উষ্ণ করে রাখার চেষ্টা করছেন।
এমন সময় মুস্তাকীম আবীরের বাঁশীতে রাগ বেজে উঠে। সামনে সুবিশাল দর্শকসারি পুরো নীরব। কৌতুহল- আবীরের বাঁশি কি বলতে চায়!
পারফরম্যান্স এ তবলায় ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক ও সেতারে সুর তুলেন ত্রিপুরা থেকে আগত সংহিতা চক্রবর্তী ও নিশিত দে।
ড. সীমা হামিদ তার স্বাগত বক্তব্যে জানান তার ফাউন্ডেশন এখন থেকে প্রতিবছর সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের অনলাইন ১৪ টি শাখায় পৃষ্ঠপোষকতা করবে।
এর অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১৪ টি শাখার প্রত্যেকটিতে একজন করে অনলাইনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে উচ্চতর পড়ালেখা বা গবেষণা করার জন্য পূর্ণ স্কলারশিপ দিবে।
এছাড়াও এ ১৪ শাখায় দেশের শীর্ষদের মধ্যে নির্বাচিত ১৪ জনকে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিক সম্মাননা প্রদান করবে।
এ ১৪ শাখার মধ্যে রয়েছে সেতার, তবলা, ভায়োলিন, বেহালা, বাঁশী, সংগীত, রবীন্দ, নজরুল, চলচ্চিত্র, নৃত্য, ফাইন আর্টস, লোকগান, অভিনয় ও বাচিকশিল্প।
পৃষ্ঠপোষকতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ড. সীমা হামিদ বলেন সংগীত ও শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিটি শাখা মানবসভ্যতার উত্তরোত্তর বিকাশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
তারুন্যদীপ্ত, উদ্যমী এই নারী বলেন, চলচ্চিত্র, শিল্প-সংস্কৃতি ও সংগীতের পৃষ্ঠপোষকতার আর্থিক মূল্য বা অর্থনৈতিক অবদান কম নয়।
“প্রতিবেশী দেশ এর প্রকৃত উদাহরন। ভারত এর মাধ্যমে অভাবনীয় বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে বছর বছর।”
তিনি আরও বলেন, আমরা তো একই সূত্রে একই উৎসে যাত্রা শুরু করেছি। তবে আমরা কেনো পিছিয়ে? এই জায়গাটায় আমাদের কেনো প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি?

“এর উত্তর হলো- আমরা পৃষ্ঠপোষকতায় পিছিয়ে আছি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক জায়গায় স্হির হয়ে আছে। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। তাহলে আমরাও পারবো। আমাদরেও অদম্য ইচ্ছে আছে, প্রজন্মের পর প্রজন্মে আমাদেরও মেধাবী সন্তানেরা আছে।”
ড. সীমা হামিদের ব্যাক্তিগত বন্ধু এটিএন নিউজ এর প্রধান নির্বাহী মূন্নী সাহা ও তার টীম ছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার খবর কর্মীরা মনোমুগ্ধকর এ অনুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন।
ড. সীমা হামিদ বলেন গুরুকূল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক শিল্প, সংগীত ও সংস্কৃতির এসব শাখা অনলাইনে গড়ে তুলেছে। এসবের রয়েছে সুবিশাল গ্রাহক ও নেটওয়ার্ক। এখন থেকে ইয়ুথ গ্লোবাল ফাউন্ডেশন এসব নেটওয়ার্কের আরও উৎকর্ষ সাধন ও সম্প্রসারণের কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গুরুকূল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক এর প্রতিষ্ঠান ‘আর্ট ও কালচার গুরুকূল’ এর প্রধান গুরু ও সম্পাদক পন্ডিত অসিত দে, আর্ট ও কালচার গুরুকূল এর শিক্ষক যথাক্রমে ইমন কুমার দে, নাজমুন নাফিজ খান, কামরুজ্জামান রাব্বী, প্রমিতা দে, হাসান সালেহ জয়, রতন কুমার দাস, দীপ্র নীশান্ত ও ইয়ুথ গ্লোবাল এর সদস্য সচিব অন্ত করিম।
নৈশভোজন ও দূর্লভ সব মিষ্টান্ন খাবারের আপ্যায়নে অনুষ্ঠাস্হল হয়ে উঠে অনন্য স্মৃতিময়।
আরও দেখুন: