সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কে?

এম মনিরুল আলম
জিলাইভ২৪.কম

দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কে?

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কে?

১২ ফেব্রুয়ারী রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো: সাহাবুদ্দিন এর নামে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

তিনি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামেই বেশী পরিচিত। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় তিনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।

সিডিউল অনুযায়ী আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে মো: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু হবেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

গণমাধ্যম কে দেয়া এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাহাবুদ্দিন বলেন, “এটি একইসাথে সম্মানের ও চ্যালেন্জের।”

আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতৃত্বে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন বিবেচনায় সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করলেন?

সরাসরি এর কোনও জবাব না পাওয়া গেলেও আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার মূল্যায়ন থেকে জানা যায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার দলের ও দলের নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্হা রেখে বিশ্বস্ততার সাথে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসাকেই রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন পাওয়ার মূল কারন।

১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা জেলার সদর উপজেলাধীন শিবরামপুর গ্রামে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শরফুদ্দিন আনসারী ও মাতা খায়রুন্নেছা।

সেই দশম শ্রেনীতে পড়ার সময় ১৯৬৬ সালে নিজ জেলা পাবনায় ছয় দফা প্রচারকালে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়া সাহাবুদ্দিন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে আজীবন আওয়ামীলীগের আদর্শকে বুকে ধারন করেছেন।

১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের আগে একই জেলায় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তিনি কারাবরন করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর কারাবরন শেষে তিনি আইন অধ্যয়ন করেন ও ১৯৮০ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস ক্যাডার কোয়ালিফাই করে মুন্সেফ বা সহকারী জজ পদে সরকারের বিচার বিভাগের চাকুরিতে নিয়োগ পান। কর্মজীবনে তিনি পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, ধর্ষন, হত্যা ও লুটপাটের ঘটনা তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০১১ সালে তিনি দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। এসময় পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে সরকারের টানাপোড়েন শুরু হলে কথিত দূর্নীতি অনুসন্ধান ও বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে সক্ষম হন। তার প্রেরিত প্রতিবেদন কানাডার আদালত কর্তৃক সমর্থিত হয়।

এসময় আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ, টি ইমামের মৃত্যু পরবর্তীতে প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়।

তিনি নিজেও আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
এর বাইরে সর্বশেষে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হয়ে একই বছরের ৯ এপ্রিল ভারতে যান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে পাবনা জেলার বিভিন্ন স্হানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

ধারনা করা হচ্ছে আজীবন বঙ্গবন্ধু ও তার রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের একজন আস্হাভাজন ও পরীক্ষীত   কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পুরস্কার হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

এছাড়া, চলতি বছর শেষে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসময় একজন আস্হাভাজন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে থাকাটাও আওয়ামীলীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাক্তিগত জীবনে মো. সাহবুদ্দিন এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্রী বিসিএস কর্মকর্তা ড. রেবেকা সুলতানা যুগ্মসচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসর গ্রহন করেন।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন
তথ্য : গণমাধ্যম, মো. সাহাবুদ্দিনের ব্যাক্তিগত এফবি ওয়াল, গনমাধ্যমে প্রকাশিত লেখা এবং উইকিপিডিয়া ও মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া।
আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment