সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন নিয়ম-কানুন। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটন মৌসুমে ছুটে যান হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু। এতে দ্বীপটি একটু একটু করে তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্বীপকে রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করতে হলে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এছাড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিও দিতে হবে। এমনকি দ্বীপে দিনপ্রতি সঠিক ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পর্যটক নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন নিয়ম-কানুন
তবে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে পর্যটনের ভরা মৌসুম। এই মৌসুমে যথারিতি পর্যটকবাহী জাহাজে করে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হবে। তবে এখন থেকে চাইলেই পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। সেখানে যেতে হলে মানতে হবে বেশ কিছু ভ্রমণের নতুন নিয়ম-কানুন। একইসঙ্গে করতে হবে বাধ্যতামূলক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন।
পর্যটন ব্যবসায়ী মোবারক আহাম্মদ বলেন, সেন্টমার্টিনে যদি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তা চিন্তাভাবনা করেই করতে হবে। সেখানে পরিবেশও রক্ষা করতে হবে আবার পর্যটনকেও প্রাধান্য দিতে হবে। ঢালাওভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না। না হয় বাংলাদেশের পর্যটনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসবে।
সাহাব উদ্দিন জনি বলেন, সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে কিন্তু দ্বীপে ৮ হাজারের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে। তাদের অধিকার রক্ষায় কী করা হচ্ছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে। এছাড়া তাদের সহযোগিতা করবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

তবে প্রশাসন বলছে, এব্যাপারে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন হয়েছে এটা আমরা পেয়েছি। এখন এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করছি না, কারণ আলোচনা করার সুযোগও আমাদের হয়নি। এই বিষয় নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, সেন্টমার্টিনের বিষয়ে সব স্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সেন্টমার্টিনগামী সব জাহাজ মালিকদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। যেহেতু আগামী মাস থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে। মূলত সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান কমোডর মো. নুরুল আবছার বলেন, পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে গিয়ে যেখানে-সেখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলছে, পরিবেশ নষ্ট করছে, রাতের বেলা আলোকিত করে গান-বাজনা করছে। এতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন তার সৌন্দর্য হারাবে।
তিনি আরও বলেন, ছোট্ট একটা উদাহরণ হলো, দ্বীপে যে কাছিম ডিম পাড়তে আসে, তারা যেখানে মানুষজনের যাতায়াত কম, শব্দ বা আলো কম সেখানে বসবাস করে। সেন্টমার্টিনে পর্যটকের আগমন বেশি, গান-বাজনা, দ্বীপে রাতের বেলা আলো জ্বালানোর কারণে কাছিম আর অবস্থান করছে না। ফলে সেন্টমার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। যার জন্য সরকারের এ উদ্যোগ। পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন করে সেন্টমার্টিনে যেতে হবে। যাতে করে সীমিতসংখ্যক পর্যটক পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে যেতে পারে।