মুফতী ফজলুল হক আমিনী (১৫ নভেম্বর ১৯৪৫ – ১২ ডিসেম্বর ২০১২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী আইনজ্ঞ (মুফতি) ও রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কওমি মাদরাসা বোর্ডেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের অন্যতম দেওবন্দি মাদ্রাসা জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ অধ্যক্ষ ছিলেন।
Table of Contents
মুফতী ফজলুল হক আমিনী । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ
প্রারম্ভিক জীবন
আমিনী ১৫ নভেম্বর ১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আমীনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ জেলার জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মুন্সীগঞ্জ জেলার মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসায় ৩ বছর পড়ালেখা করে ১৯৬১ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসায় ভর্তি হন ও দাওরায়ে হাদীসে সনদ অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউন মাদরাসায় ভর্তি হন ও এক বছর উলুমুল হাদীসের উপর উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।
কর্মজীবন
১৯৭০ সালে আমিনী ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের মাদরাসা-ই-নূরিয়া তে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ যোগদান করেন ও পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের মুত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদরাসাসহ আরও বেশ কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
আমিনী ১৯৮০-এর দশকে খেলাফত আন্দোলন নামে একটি ইসলামী দলের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও তেহরিক-ই-খাতমে নবুওয়াত নামের একটি দলের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার কাছে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১১ সাল থেকে প্রায় ২৩ মাস আমিনীকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে।

সমালোচনা
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ২০১২ সালে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে। ২০০১ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি অবৈধ ও তা বন্ধে নির্দেশ প্রদান করে।
কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি’ অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে আমিনী নারী উন্নয়ন নীতিমালা, শিক্ষা নীতি ও ফতোয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া হইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং হরতাল পালন করেন।
তিনি নারী উন্নয়নের এই নীতিমালা ও শিক্ষা নীতিমালার মাধ্যে নারীদের উত্তরাধিকরাসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির উপর বেশি অধিকার, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা অধিকার প্রতিষ্ঠাকে ইসলাম বিরোধী বলে মত দেন। কয়েকজন ইসলামি পণ্ডিত এগুলোর কোনটিই ইসলাম বিরোধী নয় বলে মত দেন ও আমিনী কোরআনের কথাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছেন বলে সমালোচনা করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
আমিনীর দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তিনি মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আমিনী ঢাকার একটি হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ইসলামী রীতি অনুযায়ী জানাজা শেষে তাকে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসায় সমাধিস্থ করা হয়।
২০১৩ সালে জীবন ও সংগ্রাম নামে তার একটি পূর্ণাঙ্গ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আলোকিত জীবন সংগ্রামী নেতৃত্ব নামে শাকিল আদনান তার একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন। মাওয়ায়েজে মুজাহিদে মিল্লাত নামে বিভিন্ন খণ্ডে তার বক্তৃতা সমূহ প্রকাশিত হয়েছে।
আরও দেখুনঃ