চার বছর পর স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ ফিরলেন। দু’টি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে নওয়াজের। এর আগে নওয়াজকে ১৪ বছরের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। তবে চিকিৎসার কারণে তিনি লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবে ক্ষমতাচ্যূত হলে পিএমএল(এন) পাকিস্তানের ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ।
শাহবাজই প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ভোটের আগে পাকিস্তানে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তিনি বিমানবন্দরে নামার পরেই তাঁর গ্রেপ্তারেরর আশঙ্কা ছিল।
চার বছর পর স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ ফিরলেন
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের একটি আদালত, নওয়াজকে সুরক্ষা জামিন দিয়ে বলেছে, আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রেফতার করা যাবে না নওয়াজ শরিফকে। তবে নওয়াজের বিরুদ্ধে মামলাগুলি চলবে বলে জানিয়েছে আদালত। নওয়াজের আইনজীবী জানিয়েছেন, আইনি উপায়েই মামলাগুলি লড়বেন তাঁর মক্কেল। নওয়াজ আদৌ ভোটে লড়তে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে তাঁর দলের বক্তব্য, দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নওয়াজই।
পাকিস্তানের আর এক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতা ইমরান খানও জেলবন্দি। মনে করা হচ্ছে দুই দলের মধ্যেই এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে।
শনিবার দুপুরে একটি চাটার্ড বিমানে দুবাই হয়ে ইসলামাবাদে পৌঁছেন নওয়াজ। বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ এবং পরিবারের সদস্যেরা। নওয়াজ দেশে ফেরায় গ্রেটার ইকবাল পার্কে মিছিলের আয়োজন করেছেন পিএমএল(এন) সমর্থকেরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত সাত হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিবিসি জানায়, নওয়াজ শরীফ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় প্রায় পুরোটা সময় পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন। তার এমন নাটকীয় ফেরার ব্যাপারে খুব কম লোকই ধারণা করতে পেরেছিলেন। এর আগে শেষবার তিনি যখন পাকিস্তানে ছিলেন তখন দুর্নীতির দায়ে সাজা খাটছিলেন, কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জেল থেকে বাইরে আসার সুযোগ পান তিনি।
নওয়াজ শরীফের দল পরিষ্কার করে বলেছে যে চলতি বছর যে নির্বানের অনুষ্ঠানের কথা ছিল, যেটি পিছিয়ে আগামী বছরে গিয়েছে, সেখানে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী তিনিই হবেন। কিন্তু ৭৩ বছর বয়সী নওয়াজ শরীফের সামনে অনেকগুলো ইস্যু আছে – আর সেটা শুধুমাত্র চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটই নয়। এই সংকটের জন্য তার দলকে বেশি দায়ী করা হয়। আরেকটা বড় ইস্যু হচ্ছে – তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইমরান খান জেলে থাকায় নির্বাচন সুষ্ঠ হবেনা বলেও মনে করেন অনেকে।

আরা সেনাবাহিনীর ব্যাপার তো আছেই। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান কীভাবে চলবে তার অনেকটাই যে তাদের উপর নির্ভরশীল। দেশের বাইরে থাকার সময় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই সামরিক শক্তির সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর এক সাবেক প্রধান ও সাবেক এক আর্মি চিফ অফ স্টাফকেই দায়ী করেছেন। এসব অভিযোগ তারা অস্বীকারও করেছেন।
তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মনে করে সেনাবাহিনীর সাথে তার একটা বোঝাপড়া হয়েছে যাতে তিনি দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু তারাও বলছেন যে এতে নিশ্চিত নয় নওয়াজ শরিফই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জুলফি বুখারী বিবিসিকে বলেন, “আমি তো তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোন রাস্তা দেখিনা, কারণ তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং আদালতের আদেশেই তিনি রাজনীতিতে আজীবনের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।”
তবে অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করেন, ভবিষ্যতে সবকিছুই নওয়াজ শরীফের পক্ষে ঘুরে যাবে। “আমাদের রাজনীতির চেহারা ও চিত্রনাট্য কোনটাই বদলায়নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক চরিত্রের পরিবর্তন ঘটছে,” বিবিসিকে বলেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়াজাহাত মাসুদ। “২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খান সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় আসে। আর এখন তারা ব্যস্ত নওয়াজ শরীফের জন্য নির্বাচন করতে।”
তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি যে তারা নওয়া শরিফকে চায় কী-না। একই সাথে সেনাবাহিনী ও ইমরান খান – কোন পক্ষই নিজেদের মধ্যে কখনো বোঝাপড়া ছিল বলে স্বীকার করেনি।
আরও দেখুনঃ