মসিউর রহমান (২৫ জুন ১৯৫৩–১ নভেম্বর ২০২২) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
Table of Contents
মসিউর রহমান । বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ
প্রারম্ভিক জীবন
মসিউর -রহমান ২৫শে জুন ১৯৫৩ সালে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ০৮ নং চাঁদপুর ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মনিরউদ্দিন বিশ্বাস এবং মাতার নাম সুলতানা নেসা। তিনি নিজ জেলায় শিক্ষাজীবন শুরু করে সরকারি কেশব চন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করেন।
রাজনৈতিক জীবন
মসিউর -রহমান ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরবর্তী জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠা করা বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরপর দুইবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একই ইউনিয়ন থেকে ১৯৮৭ সালে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার ফলে ৭ মাস কারাভোগ করেন।

১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদের ৮২তম আসন, ঝিনাইদহ-২ থেকে সংসদ নির্বাচন করে পরাজিত হন। তবে ১৯৯১, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, জুন ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে একই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ সহ সংসদীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সহ জাতীয় সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান
মসিউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭০ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক মাস কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে ৮ নং সেক্টরে হরিণাকুন্ডু থানা কমান্ডার হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ঝিনাইদহ, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা থানার বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেওয়ার জন্যে ঝিনাইদহ আনসার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা পালন করেন ও সরকারী ভাবে মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। তিনি উক্ত ক্যাম্পের কমান্ডার নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী ঝিনাইদহে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করেন এবং উক্ত সংসদের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দূনীতির অভিযোগে মসিউর রহমানের নামে দূর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে যশোরের বিশেষ জজ আদালত অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা ও তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত কার রায় দেয়। পরবর্তীতে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ব্যক্তিগত জীবন
মসিউর রহমানের স্ত্রী মাহবুবা রহমান শিখা পেশায় একজন আয়কর আইনজীবী এবং ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সদস্য। এই দম্পতির শামীম রহমান শিমু, ডাঃ ইব্রাহীম রহমান, শোয়াইব রহমান নামে তিন সন্তান রয়েছে।
আরও দেখুনঃ